ঢাকা, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২

আন্তর্জাতিক মানের হতে যাচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি 

ইনজামামুল হক পার্থ
ইনজামামুল হক পার্থ

রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৭ ১২:৪৩:০৮

আন্তর্জাতিক মানের হতে যাচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি 

ইনজামামুল হক পার্থ: ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে একটি নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়— ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনলাইন প্রকাশিত খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এটি প্রতিষ্ঠিত হলে রাজধানীর উচ্চশিক্ষায় নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। যদিও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়নি, বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কাঠামোর অধীনে।

দেশের অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এটি পরিচালিত হবে, তবে থাকবে কিছু বিশেষ সুবিধা। যেমন—বিদেশি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ডিসিপ্লিন পরিবর্তনের সুযোগ এবং প্রথমবারের মতো টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগের বিধান। তবে এটি পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসিত হবে না, যেমনটি ১৯৭৩ সালের আইনে পরিচালিত পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান জানিয়েছেন, খুব স্বল্প সময়ে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিসিপ্লিন পরিবর্তনের মতো নমনীয়তা রাখা হয়েছে।

কাঠামো ও কার্যক্রম

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম সাত কলেজ ক্যাম্পাসে বিভক্ত থাকবে।

স্কুল অব সাইন্সেস: ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে

স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ: সরকারি বাঙলা কলেজে

স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ: সরকারি তিতুমীর কলেজে

স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস: কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে

প্রতিটি কলেজ আলাদা ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত হবে। প্রশাসনিক ভবন, অডিটোরিয়াম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আলাদা স্থানে নির্মিত হবে।

পাঠদান ও ভর্তি ব্যবস্থা

শিক্ষাদান হবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে—৩৫% সরাসরি ও ৪০% অনলাইনে। তবে সব পরীক্ষা সশরীরে নেওয়া হবে। স্নাতক পর্যায়ে প্রথম চার সেমিস্টারে সাধারণ শিক্ষা, পরবর্তী চার সেমিস্টারে ডিসিপ্লিনভিত্তিক পড়াশোনা হবে। নির্দিষ্ট শর্তে শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসে ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে—দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী, সব ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ কিংবা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে পারবেন।

সময়সূচি ও কলেজের অবস্থান

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আলাদাভাবে চলবে। দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম হবে, যাতে সকালে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে। কলেজগুলোর বিদ্যমান পরিচয় ও অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ থাকবে।

অতিরিক্ত সুযোগ ও নীতিমালা

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে এমফিল ও পিএইচডি কার্যক্রম চালু থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিসি, প্রো-ভিসি বা প্রক্টরের মতো প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকরা কোনো শিক্ষক সমিতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। কলেজ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলাদা থাকলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে বাড়তি সুবিধা ভোগ করবেন।

সংকট ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ

উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে তাদের পড়াশোনার পরিবেশ সংকুচিত হতে পারে। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। তবে ইউজিসি আশ্বস্ত করেছে, কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং আলাদা প্রশাসনে পরিচালিত হবে।

সবশেষে, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেছেন—“এটি হবে একটি আধুনিক, ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ভবিষ্যতের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।”

ইএইচপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত