ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২

রাবির আন্দোলনের হাওয়া এবার ঢাবিতে, সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২১ ২৩:৪৭:১৯

রাবির আন্দোলনের হাওয়া এবার ঢাবিতে, সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও (ঢাবি) একই দাবিতে সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রাবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন ও আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা স্থগিত ঘোষণা করার পর ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এই দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।

গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাবি প্রশাসনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোষ্য কোটা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন করেন এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই আন্দোলনের হাওয়া এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে লেগেছে। ঢাবির শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২'-এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মইনুল ইসলাম পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, "শুধু শিক্ষক নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রীও কোটা পায়। এটা অযৌক্তিক।" তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, কারণ এখন আর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা সরাসরি ভর্তি হতে আসেন না। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, "রাবিতে পোষ্য কোটা স্থগিত হয়েছে, এবার ঢাবির পালা।" হাফিজুল ইসলাম হাফিজ নামে আরেক শিক্ষার্থীও ঢাবিতে অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

এর আগে ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়।

রিটকারীরা হলেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ল অ্যান্ড ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার, অ্যাডভোকেট লোকমান হাকিম, একজন ছাত্রের অভিভাবক মো. হোসেন আলী ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম।

রিটের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫%, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১% এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% কোটা বহাল রেখে বাকি সব কোটা বাতিলের দাবি জানানো হয়। নোটিশে বলা হয়েছিল যে, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে এবং অন্য কোনো মানদণ্ড বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী এবং অযৌক্তিক।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বাতিল করা হয়। সে সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এটিকে ‘যৌক্তিক সংস্কার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, ভর্তি পরীক্ষায় কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা রাখা হয়েছে। তবে আইনি নোটিশ পাওয়ার পরও পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা কর্তৃপক্ষ বহাল রেখেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ জানান, সুপ্রিম কোর্টে রিটের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি এবং আদালতে তা এখনো চলমান রয়েছে।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্যান্য সংবাদ