ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২
শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, নতুন সম্ভাবনার দুয়ার

মোবারক হোসেন
সিনিয়র রিপোর্টার

মোবারক হোসেন: দেশের অর্থনীতির শ্লথ গতি ও সীমিত বিনিয়োগ সুযোগের প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাস শেষে একক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজার এক্সপোজার তাদের মোট মূলধনের ১৮.১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই হার ছিল ১৫.২৮ শতাংশ।
একই সময়ে ব্যাংক ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান—মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসসহ—সমন্বিত এক্সপোজারও ২৩.২৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবৃদ্ধি বাজারে নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা লেনদেনের পরিবেশকে চাঙ্গা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণ ও প্রেক্ষাপট
ব্যাংকাররা মনে করছেন, শেয়ারবাজার যখন তুলনামূলক নিম্নমুখী অবস্থায় ছিল, তখন অনেক ব্যাংক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এতে মূলধনী মুনাফা ও ডিভিডেন্ড আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মার্চ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ২১৯.১৬ পয়েন্টে থাকলেও সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২৩.৭৮ পয়েন্টে। এটি ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগে আস্থার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, একক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং সমন্বিতভাবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এই সীমার ভেতরে থেকেই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডুয়া নিউজকে বলেন, এই এক্সপোজারের মধ্যে তালিকাভুক্ত শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ঋণও অন্তর্ভুক্ত থাকে। তিনি বলেন, “শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর উপস্থিতি মূলত দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকতে হবে।”
অতীতের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান বাস্তবতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সরাসরি শেয়ারবাজার কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। ২০২৪ সালে ডিএসই’র বাজার মূলধনে ব্যাংকগুলোর অবদান বেড়ে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১৫.১ শতাংশ।
তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। ২০০৯ সালে ব্যাংকগুলো আইনসম্মত সীমার বাইরে গিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছিল, যার ফলে ২০১০-১১ সালের শেয়ারবাজার ধস দেখা দেয়। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার আইনানুগ সীমার মধ্যেই রয়েছে এবং ধাপে ধাপে বাড়ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলোর বর্তমান প্রবৃদ্ধি মূলত অর্থনীতির ধীরগতি, ঋণের সীমিত চাহিদা ও বাজারে অতিরিক্ত তারল্যের কারণে ঘটছে। তবে এটিকে নেতিবাচক নয়, বরং ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন তারা। কারণ শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়লে বাজারের স্থিতিশীলতা ও আস্থা দুই-ই বৃদ্ধি পায়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনায় শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, ব্যাংকগুলোর মতো শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি বাজারকেও স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
তাদের মতে, ব্যাংকগুলো যদি স্বল্পমেয়াদি লাভের পরিবর্তে টেকসই বিনিয়োগ কৌশল অনুসরণ করে, তবে এটি পুরো আর্থিক ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তিশালী ভরসা হয়ে উঠবে। এর ফলে একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিও দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হবে।
এএসএম/
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সাবেক কর্মীদের ১৮২৩ কোটি টাকা আটকে রেখেছে ম্যারিকো
- শেয়ার কারসাজিতে ৫ বিনিয়োগকারীকে ১৩ কোটি টাকা জরিমানা
- এক হাজার কোটি টাকার মামলায় শিবলী রুবাইয়াত গ্রেপ্তার
- তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে অলিম্পিক এক্সেসরিজ
- সরকারের সিদ্ধান্তে ডুবছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন?
- শেয়ারবাজারে প্রতারণা ঠেকাতে মাঠে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা
- শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- সর্বোচ্চ চাহিদায় নাগালের বাইরে ১৪ প্রতিষ্ঠান
- আরএসআই বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত পাঁচ শেয়ারে
- কৃত্রিম চাপে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, সহসা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা
- এক কোম্পারি অস্থিরতায় শেয়ারবাজারে তোলপাড়
- মুনাফা বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হাক্কানী পাল্প
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইস্টার্ন হাউজিং
- পাঁচ কোম্পানির কারণে থমকে গেল শেয়ারবাজারের উত্থান