ঢাকা, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

৩.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো ঋণের বোঝা নিয়ে ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী লেকোর্নু

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১৫:২৯:৩৯

৩.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো ঋণের বোঝা নিয়ে ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী লেকোর্নু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সেবাস্তিয়েন লেকোর্নু, যিনি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। লেকোর্নুর নিয়োগ ঘটে ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, যখন তার পূর্বসূরী ফ্রাঁসোয়া বাইরু অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান।

৩৯ বছর বয়সী লেকোর্নু গত তিন বছর ধরে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে দেশের ভূমিকা সামলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিবিসি জানিয়েছে, শীর্ষ পর্যায়ের পছন্দের একজন হিসেবে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এলিসি প্রাসাদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লেকোর্নু মাখোঁর দ্বিতীয় মেয়াদে সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং তার মূল কাজ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী বাজেট পাস করানো। বাইরুর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া বাজেট পাস করাতে ব্যর্থ হওয়ায় অনাস্থা ভোটে হেরে যায়।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর বাইরু পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপরই মাখোঁর মেয়াদে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন লেকোর্নু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জানান, তার লক্ষ্য হলো ফ্রান্সের স্বাধীনতা ও শক্তি রক্ষা করা, জনগণের সেবা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

লেকোর্নুর সামনে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো ফ্রান্সের ঋণ ব্যবস্থাপনা। চলতি বছরের দেশটির ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো, যা মোট জিডিপির ১১৪ শতাংশ। বাইরু ৪৪ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের কাটছাঁট প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু বাজেট পরিকল্পনা সংসদে আস্থা ভোটে পাস করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় পরিষদে তার সরকার ৩৬৪ ভোটে অনাস্থা পায়, পক্ষে মাত্র ১৯৪ ভোট পড়ে।

মধ্যপন্থী মিত্ররা লেকোর্নুর নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে। বাইরুর দল মোদেমের মন্ত্রী মার্ক ফেনো বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ করে বাজেট বিষয়ে সব রাজনৈতিক শক্তিকে সমঝোতায় আসতে হবে। তবে বামপন্থী দল ‘ফ্রান্স আনবাউড’-এর নেতা জ্যঁ-লুক মেলঁশো বলেন, এখন সময় হয়েছে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর বিদায়ের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাখোঁ মধ্যবামের দিকে হাত বাড়াতে পারতেন। সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ে ফোর আগেই সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাক পাননি। অন্যদিকে চরম ডানপন্থী নেতা মারি ল পেন দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট এখন তার ঘনিষ্ঠদের নিয়ে ‘বাংকার থেকে মাখোঁবাদকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন’।

২০১৭–২০২০ পর্যন্ত মাখোঁর প্রথম প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার ফিলিপ লেকোর্নুর প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা ও বিতর্ক মোকাবেলার দক্ষতা এই সময়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিপ আরও বলেন, লেকোর্নুকে সমাজতান্ত্রিকদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে, না হলে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে এবং নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

তাছাড়া, আগামী বুধবার ‘ব্লোকোঁ তু’ নামে তৃণমূল আন্দোলন ব্যাপক বিক্ষোভ ডাকার পরিকল্পনা করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত