ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২
নবীজীর (সা.) সময়কার মদিনা রাষ্ট্রে কল্যাণমুখী ব্যবস্থাপনা

ইসলামী ডেস্ক :মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর নবী মুহাম্মদ (সা.) একটি সুশৃঙ্খল, ন্যায়ভিত্তিক এবং মানবিক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার, নৈতিকতা এবং মুসলিম সমাজের কল্যাণ ছিল তাঁর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মূল উদ্দেশ্য। তিনি জুলুম, সুদ, প্রতারণা ও মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন।
মদিনায় নবীজি একটি স্বাধীন মুসলিম বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে মাপে ও ওজনে স্বচ্ছতা, প্রতারণা থেকে বিরত থাকা এবং পণ্যের প্রকৃত অবস্থা প্রদর্শনের মতো ন্যায্য নিয়ম চালু ছিল। তিনি নিজে বাজার তদারকি করতেন এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেন।
তিনি লেনদেনের ক্ষেত্রে লিখিত রেকর্ড রাখার গুরুত্ব দেন, যাতে অধিকার নিশ্চিত হয় এবং অনিয়ম প্রতিরোধ করা যায়। ঋণগ্রস্তদের সঙ্গে সদয় আচরণ এবং ঋণের যথাসময়ে পরিশোধে উৎসাহ প্রদান ছিল এই ব্যবস্থার অংশ। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জাহেলি যুগের মতো সন্তান বা দাসকে শাস্তি দেওয়ার রীতি তিনি বিলুপ্ত করেন।
সুদকে তিনি সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেন এবং আর্থিক লেনদেনে বৈধ ও ন্যায্য পথে চলার নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে জাহেলি আরবের অন্যায় আর্থিক প্রথার অবসান ঘটে এবং অর্থনীতিতে ন্যায্যতা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা পায়।
মদিনার অর্থনীতিতে সততা, বিশ্বস্ততা, সহমর্মিতা ও উদারতার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ব্যবসা-বাণিজ্য, ঋণ ও সম্পদের বণ্টন—সব ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা নিশ্চিত করা হয়েছিল। এই নৈতিকতা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল।
ইসলাম পরিশ্রম ও উৎপাদনমুখী জীবনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মদিনার সমাজে কৃষিকাজ, কারুশিল্প, পশুপালন, বাণিজ্য ও নির্মাণশ্রম—সব ক্ষেত্রেই কর্মঠতা ছিল মূল্যবান গুণ। নিজের উপার্জনে জীবিকা নির্বাহকে সম্মানজনক মনে করা হতো এবং ভিক্ষা নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল।
নবীজি ঘোষণা দেন—যে অনাবাদী জমি চাষ করে, সেটির মালিক সে-ই হবে। এভাবে কৃষিকাজে উৎসাহিত করা হয় এবং উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। খাইবারসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জমি সাহাবিদের মধ্যে বণ্টন করে চাষাবাদ ও রাষ্ট্রীয় আয়ের পথ সুগম করেন তিনি।
তিনি সেচ ও জল বণ্টনের ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল নিয়ম চালু করেন। কারও জমি যাতে অন্যের জমিকে বাধা না দেয়, সে বিষয়ে বিশেষ নজর ছিল। গাছ কাটলে নতুন গাছ লাগানোর নির্দেশের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মদিনায় বাণিজ্য ছিল ইসলামী অর্থনীতির একটি মূল ভিত্তি। বাণিজ্যে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। বিভিন্ন পেশাজীবী যেমন কামার, দর্জি, স্বর্ণকার, কাঠ ও তামার কারিগরদের কাজকে সম্মান দেওয়া হতো। গহনা, অস্ত্র ও অন্যান্য শিল্পের উন্নয়নকেও উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল।
ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম মূলনীতি ছিল সম্পদের ন্যায্য বণ্টন এবং ধনী-গরিবের ব্যবধান হ্রাস করা। জাকাত ও জিজিয়ার মাধ্যমে আয় সংগ্রহ করা হতো এবং তা দরিদ্র ও অসহায়দের কল্যাণে ব্যয় করা হতো। রাষ্ট্রীয়ভাবে করের বোঝা সীমিত রাখা হয়েছিল এবং শোষণমূলক কর নিষিদ্ধ ছিল।
মদিনায় রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ছিল নির্দিষ্ট নিয়ম ও তদারকি। নবীজি দায়িত্বশীল সাহাবাদের দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার পরিচালনা করতেন এবং দুর্নীতির সুযোগ থাকত না। রাষ্ট্রীয় ব্যয় জরুরি প্রয়োজন ও জনকল্যাণে দ্রুত ব্যবহার করা হতো।
ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান আয়ের উৎস ছিল ছয়টি:১. জাকাত – মুসলমানদের কাছ থেকে সংগৃহীত ধর্মীয় কর২. গনিমত – যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ৩. ফায় – যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুর ছেড়ে যাওয়া সম্পদ৪. জিজিয়া – অমুসলিমদের কর৫. দান ও ওয়াক্ফ – জনকল্যাণমূলক ব্যক্তিগত অবদান৬. ঋণ – রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে গ্রহণযোগ্য অর্থ
নবীজি (সা.)-এর সময়কার মদিনা রাষ্ট্রে অর্থনীতি কেবল উপার্জনের জন্য নয়, বরং ন্যায্যতা, মানবিকতা, সততা ও কল্যাণের ভিত্তিতে গঠিত ছিল। এই অর্থনৈতিক মডেল আজকের দুনিয়ার জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
তথ্যসূত্র: ড. লাইলা হামদানের ‘কাইফা কানা ইকতিসাদুল মাদিনাতি তাহতা জিল্লি রাসুল (সা.)’ বই থেকে সংগৃহীত ।
নয়ন
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে অলিম্পিক এক্সেসরিজ
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি ট্রেডিং টিপস
- রবির মাধ্যমে দেশে আসছে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
- সর্বোচ্চ চাহিদায় নাগালের বাইরে ১৪ প্রতিষ্ঠান
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- সাবেক কর্মীদের ১৮২৩ কোটি টাকা আটকে রেখেছে ম্যারিকো
- চার জেডের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ আস্থা
- শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মাথাব্যথার ১১ শেয়ার