ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২

ব্যাংকের শেয়ার ধারণের সীমা ২৫% করতে চায় বিএবি

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ০৮:৩৫:০২

ব্যাংকের শেয়ার ধারণের সীমা ২৫% করতে চায় বিএবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। আজ (৭ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে বিএবি'র চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার এই প্রস্তাবগুলো পেশ করেন, যেখানে শেয়ারহোল্ডারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং পরিচালনা পর্ষদের উপর থাকা বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিল করার দাবি জানানো হয়েছে।

বিএবি চায় ব্যাংকের কার্যকারিতা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের গঠন এবং কার্যপরিচালনার কাঠামো ভিন্ন ভিন্ন হোক। তাদের মতে, ব্যাংকের পারফর্ম্যান্স, ঝুঁকির মাত্রা এবং টেকসই উন্নয়ন বিবেচনা করে বোর্ড কাঠামো নির্ধারণ করা উচিত। এর ফলে ভালো পারফর্ম্যান্স করা ব্যাংকগুলো পুরস্কৃত হবে এবং দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোর তত্ত্বাবধানে উন্নতি করতে বাধ্য হবে।

পরিচালকদের মেয়াদ ও পারিবারিক সদস্য

পরিচালকের মেয়াদ: বর্তমান আইন অনুযায়ী, একজন পরিচালক সর্বোচ্চ ১২ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং তিন বছরের বিরতির পর পুনরায় নিযুক্ত হতে পারেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই মেয়াদ কমিয়ে ৬ বছর করার কথা বলা হয়েছে। বিএবি এটিকে 'অত্যন্ত কঠোর' বলে মনে করে এবং এর পরিবর্তে ৯ বছর মেয়াদ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের যুক্তি, দীর্ঘমেয়াদী ও অভিজ্ঞ পরিচালকদের ধারাবাহিকতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং কৌশলগত নেতৃত্বের জন্য জরুরি।

পারিবারিক পরিচালক: বর্তমান আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন সদস্য একই ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই সংখ্যা কমিয়ে দু’জন করা হয়েছে। তবে বিএবি এই সীমা পুরোপুরি তুলে দেওয়া বা শিথিল করার পক্ষে। তারা মনে করে, এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও মনোযোগী পরিচালক পর্ষদে যুক্ত হতে পারবেন।

পরিবারের সংজ্ঞা: বিএবি 'পরিবার' এর সংজ্ঞাকে শুধুমাত্র স্বামী/স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা উদাহরণ হিসেবে ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেছে, এই দেশগুলোতে পরিবারের সংজ্ঞা আরও বাস্তবসম্মত।

শেয়ার ধারণ ও ভোটাধিকার

শেয়ার ধারণের সীমা: বর্তমানে কোনো ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ ১০% শেয়ার ধারণ করতে পারেন। বিএবি এই সীমা তুলে দিয়ে তা ২৫% বা তারও বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, উচ্চ শেয়ার ধারণের সীমা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মালিকানা, দায়িত্ব এবং সুশাসনের অনুভূতি তৈরি করে।

ভোটাধিকার: বিএবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছে, যেখানে বলা হয়েছিল যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ৫% এর বেশি শেয়ার ধারণ করলেও তারা মোট ভোটিং ক্ষমতার ৫% এর বেশি প্রয়োগ করতে পারবে না। বিএবি এই বিধিনিষেধ পুরোপুরি বাতিল করার পক্ষে।

বিএবি’র অন্যান্য প্রস্তাবনা

• স্বাধীন পরিচালক: বর্তমান আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকে ২০ জন পর্যন্ত পরিচালক থাকতে পারেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ২-৩ জন স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশোধনীতে মোট পরিচালকের সংখ্যা ১৫ জন করার এবং তাদের ৫০% স্বাধীন পরিচালক রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএবি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং বিদ্যমান নিয়ম বহাল রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, অর্ধেক পরিচালক স্বাধীন হলে শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে এবং তা মুনাফা ও প্রবৃদ্ধির চেয়ে আইন মানার দিকে বেশি গুরুত্ব দেবে।

• অন্য ব্যাংকে শেয়ার ধারণ: বর্তমান আইনে একজন শেয়ারহোল্ডার অন্য ব্যাংকে শেয়ার ধারণ করতে পারেন। তবে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা পরিবারকে একাধিক ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারণ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বিএবি এই ধারাটি বাতিল করার সুপারিশ করেছে, কারণ এটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে।

• খেলাপি হলে পরিচালকের পদ: বর্তমান আইনে কোনো পরিচালক খেলাপি হলে এক বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই সময়সীমা তিন বছর করার কথা বলা হয়েছে, যা বিএবি বাতিল করে ছয় মাস করার প্রস্তাব দিয়েছে।

• পরিচালকদের নিয়োগ: বিএবি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা বা নিয়ন্ত্রিত কোম্পানির পরিচালকদের একই সাথে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে, যা বর্তমান আইন এবং প্রস্তাবিত সংশোধনী উভয়ই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত