ঢাকা, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

অব্যবস্থাপনায় বিদায় নিয়েছে ১৪ আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ১১:১৬:১৩

অব্যবস্থাপনায় বিদায় নিয়েছে ১৪ আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী সংখ্যা প্রতিবছর বাড়লেও উল্টো কমছে এয়ারলাইনসের সংখ্যা। একসময় যেখানে ১৬টি বিদেশি এয়ারলাইনস সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করত, সেখানে এখন আন্তর্জাতিক রুটে সক্রিয় আছে মাত্র দুটি বিদেশি ও দুটি দেশি সংস্থা। ফলে আন্তর্জাতিক মর্যাদা ধরে রাখলেও সেবার মান ও সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সূত্র জানায়, ২০০০ সালে শাহ আমানত বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথম পর্যায়ে বছরে ছয় লাখ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। দুই যুগ পর সেই একই অবকাঠামোতে যাত্রী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৬ লাখে। ২০২২ সালে এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন ১৪ লাখ ৫৫ হাজার যাত্রী, ২০২৩ সালে সংখ্যা বেড়ে হয় ১৬ লাখ ২৭ হাজার এবং ২০২৪ সালে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৪১ হাজার। যাত্রী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও আধুনিক সেবার অভাবে বিদেশি এয়ারলাইনস একে একে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।

গত ১৬ বছরে চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ১৪টি বিদেশি এয়ারলাইনসের মধ্যে রয়েছে—ফ্লাই দুবাই, স্পাইস জেট, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার, থাই এয়ার, থাই স্মাইল এয়ার, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার, মালিন্দো এয়ার, রোটানা এয়ার, হিমালয়ান এয়ার, রাস আল কাইমা এয়ার, টাইগার এয়ারওয়েজ ও সিল্ক এয়ার। একই সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি দেশি এয়ারলাইনসও। বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ার অ্যারাবিয়া, সালাম এয়ার, বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস বাংলা।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের সক্ষমতা ঘাটতি ও সেবা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষও। মাত্র দুটি ব্যাগেজ বেল্ট ও সীমিত ইমিগ্রেশন কাউন্টারের কারণে যাত্রীদের লাগেজ পেতে অনেক সময় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বিমানবন্দরের সক্ষমতা বছরে ছয় লাখ যাত্রী সামলানোর হলেও বাস্তবে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি যাত্রী।

এদিকে, বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশি-বিদেশি ছয়টি এয়ারলাইনসের কাছে দুই হাজার ১২৬ কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি বকেয়া রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস—প্রায় এক হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া রিজেন্ট এয়ার, জিএমজি এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলার কাছেও বিভিন্ন অংকের পাওনা রয়েছে। বকেয়া আদায়ে বারবার তাগাদা দিয়েও আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

তবে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আকাশ পরিবহন সেবায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। ইতিমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, চলে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবারও ফেরা শুরু করেছে। ফ্লাই দুবাই আগামী অক্টোবর থেকে অপারেশন শুরু করতে পারে, সৌদি এয়ারলাইনস ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে এবং কাতার এয়ারওয়েজও যোগাযোগ করছে। সংকট নিরসন হলে চট্টগ্রামে নতুন এয়ারলাইনস আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত