ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

জুবায়ের-মোসাদ্দেকদের 'ব্রেইল ইশতেহার' পাঠ করলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ২০:৩৬:২৯

জুবায়ের-মোসাদ্দেকদের 'ব্রেইল ইশতেহার' পাঠ করলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে সকলের অংশীদারত্ব নিশ্চিত, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য 'ব্রেইল ইশতেহার' ঘোষণা করেছেন যুবাইর বিন নেছারী (এবি জুবায়ের) ও মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মাদের ৪ সদস্যের আংশিক প্যানেল।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রেইল ইশতেহার উন্মোচন করা হয়। এরপর হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের ২৩-২০ সেশনের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ইমরান মোসাদ্দেক আলীর ইশতেহার সংক্ষিপ্ত ভাবে পাঠ করেন। এবারই প্রথম কোন প্রার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের কথা মাথায় রেখে ইশতেহার ছাপিয়েছেন যদিও মোসাদ্দেক বলেছেন যে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে কাঙ্খিত পরিমানে ছাপাতে পারেননি তিনি৷

মুসাদ্দিকের ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাহিত্য চর্চা বৃদ্ধির জন্য ব্রেইলের মাধ্যমে পৃথক কর্ণার সৃষ্টি করা, অডিও বুকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। চর্যাপদ থেকে আধুনিক সাহিত্য, বাংলা ও বিশ্বসাহিত্য নিয়ে কর্মশালা ও পাঠচক্র আয়োজন, ত্রৈমাসিক প্রকাশনা, দেয়াল পত্রিকা, বইমেলা, আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনসহ বহুমাত্রিক কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল ও অডিও সাহিত্যকর্ম, নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাব ফেস্ট, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের ব্যবস্থাও ইশতেহারে স্থান পেয়েছে।

এছাড়া তিনি জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে সাহিত্য-সংস্কৃতি সৃষ্টিতে পৃষ্ঠপোষকতা, লোকসঙ্গীত ও আঞ্চলিক উৎসব, হিজরি নববর্ষ ও ইসলামি অনুষ্ঠান, দুর্গাপূজা ও সনাতনী সংস্কৃতি, বড়দিন ও বৌদ্ধ উৎসব, পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বৈসু-বিজুসহ বৈচিত্র্যময় আয়োজনে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

মুসাদ্দিক ক্যাম্পাসের ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ, অনলাইন সাংস্কৃতিক আর্কাইভ তৈরি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু, বৈষম্যের শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বিশেষ সেল গঠন এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদানের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।

ইশতেহারে তিনি ঘোষণায় মুসাদ্দিক বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সাংস্কৃতিক বিভাজন করা হয়েছিল। ইফতার প্রোগ্রাম, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি প্রোগ্রাম করা যেতো না। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সবার অংশীদারত্ব চাই। সকল বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সহাবস্থান নিশ্চিত করা, কালচারাল ফ্যাসিজমের অবসান ঘটানো, জুলাই বিপ্লবকে শক্তিশালী করা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।

পরে সমাজ সমাজসেবা সম্পাদক পদে যুবাইর বিন নেছারী (এবি যুবায়ের) বলেন, ইশতেহারের ফুলঝুরি ফিতে চাচ্ছি না। ক্যাম্পাস নিয়ে আমার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। ক্যাম্পাস লাইফের শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে এক্টিভিজম করেছি। তবে সীমাবদ্ধতা থাকায় সব কাজ করার সুযোগ হয়নি। ডাকসু উপলক্ষে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।

এবি জুবায়েরের ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে :

১। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় শহিদ মোর্তজা মেডিক্যালকে একটি মানসম্মত ও আধুনিক মেডিক্যালে রুপান্তর করা। পাশাপাশি পিজি ও ঢামেকের ডাক্তারদের সমন্বয়ে একটা বিশেষ মেডিকেল জোন গঠন করা যেখানে ঢাবিয়ানরা তাদের বৈধ আইডি কার্ড শো করে মেডিকেল সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে৷

২। হলপাড়ায় একটি ফার্মেসি স্থাপনের ব্যবস্থা করা৷

৩। ক্যাম্পাস এরিয়া বহিরাগত নিয়ন্ত্রিত এবং পাগল, ভবঘুরে, ভিক্ষুক মুক্ত রাখার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ব্যবস্থা করা।

৪। পুরো ক্যাম্পাস এরিয়ায় পর্যাপ্ত লাইটিং এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা৷ পাশাপাশি সুফিয়া কামাল হল থেকে টিএসসি পর্যন্ত এবং কুয়েত মৈত্রী হল থেকে তোরণ পর্যন্তও পর্যাপ্ত লাইটিং এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা।

৫। কুয়েত মৈত্রী, বঙ্গমাতা এবং সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বাস অথবা শাটলের ব্যবস্থা করা।

৬। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, স্পেশাল কেয়ার এবং পিরিয়ডকালীন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।

৭। ক্যাম্পাস এরিয়া শব্দদূষণ মুক্ত রাখা। বিশেষত টিএসসি এবং রাজু ভাস্কর্য এলাকার ঐতিহাসিক শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রিত রেখে রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, আইএমএলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমিয়ে আনা৷

৮। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিদ্যমান বিড়ম্বনার স্থায়ী সমাধান

৯৷ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বুথগুলো সক্রিয় করা।

প্রসঙ্গত, যুবাইর-মুসাদ্দিক প্যানেলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়ছেন যুবাইর বিন নেছারী (এবি জুবায়ের), সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহম্মদ। এছাড়া সদস্য পদে লড়ছেন আশিক খান এবং আব্দুর রহমান আল ফাহাদ।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত