ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
বাতিলের ১৩ বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রিভিউ শুনানি

দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য করা আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর পর, মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হয়। এই শুনানির দিকে তাকিয়ে আছে সারাদেশের মানুষ, কারণ এর রায়ের ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী কাঠামোর রূপরেখা।
আদালতে আজ আবেদনকারী পক্ষের হয়ে আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সকাল থেকেই ছিল আইন অঙ্গনের সবার দৃষ্টি। শুনানির শুরুতে আবেদনকারীপক্ষ তাদের আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তারা মূলত ২০১১ সালের রায়ের পর্যবেক্ষণে যে ত্রুটি ছিল এবং দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম অবিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করতে ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। পরবর্তীতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে যুগান্তকারী এক রায়ে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেন। তবে আদালত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও দুটি নির্বাচন এই পদ্ধতিতে করার পক্ষে মত দিলেও, সেই সুযোগ না নিয়ে তৎকালীন সরকার সংসদীয় আইনের মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনীর দ্বারা সংবিধান থেকে ব্যবস্থাটি পুরোপুরি বিলুপ্ত করে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট বদলে যায়। নতুন বাস্তবতায় একটি স্থায়ী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, আপিল বিভাগের সেই পুরোনো রায় পুনর্বিবেচনার জন্য একাধিক আবেদন দাখিল করা হয়।
এই রিভিউ আবেদনগুলো সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এসেছে, যা বিষয়টির গুরুত্বকে তুলে ধরে। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যাদের পক্ষে আবেদন করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যাদের পক্ষে আবেদন করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এছাড়া নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি আবেদন করেন। পরবর্তীতে নওগাঁর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও পৃথকভাবে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি একবার শুনানির দিন ধার্য হলেও তা মুলতবি করা হয়েছিল। আজ থেকে শুরু হওয়া এই শুনানি দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- আইসিবি’র বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি
- কেয়া কসমেটিক্সের ৮ হাজার কোটি টাকা উধাও, চার ব্যাংককে তলব
- সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে শেয়ারবাজারের খান ব্রাদার্স
- ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় বাংলাদেশের ১১ তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- মূলধন ঘাটতিতে দুই ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- দুই খবরে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারের চমক
- চলতি বছর শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্রায়াত্ব দুই প্রতিষ্ঠান
- সাকিবের মোনার্কসহ ৮ ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- ২৩ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণা, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করল ডিএসই
- বিএসইসির নতুন মার্জিন বিধিমালার খসড়া অনুমোদন
- বিমা আইন সংস্কার: বিনিয়োগ ও আস্থায় নতুন দিগন্ত
- কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর: কমছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদ