ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রসঙ্গ

২০২৫ আগস্ট ২১ ০৬:২৮:৪৫

পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রসঙ্গ

আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বইগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম গণহত্যাকারী হিসেবে সংযোজন করা হবে।

এ নতুন পাঠ্যক্রমে আরও যোগ হচ্ছে গত চারটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিবরণ। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের দ্বিতীয় পত্রে ২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত নির্বাচন, ২০১৪ সালের বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার নির্বাচন, ২০১৮ সালের আগাম রাতের ভোটের ঘটনা এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র স্থান পাচ্ছে।

এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে সংক্ষেপ আকারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শুরুতে এটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব এলেও জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসি) সেই প্রস্তাব নাকচ করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক—উভয় স্তরের বইয়ে ভাষণটি সংক্ষেপে থাকবে।

গত সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুমোদন সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। আলোচনায় প্রথমে অষ্টম ও দ্বাদশ শ্রেণির বই থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরানোর প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত আংশিকভাবে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, অষ্টম শ্রেণির বইয়ে আগেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল, এবারও থাকবে, তবে সংক্ষিপ্ত আকারে। একাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য হবে।

সভায় নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই থেকে ‘রহমানের মা’ গল্পটি ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এবং ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নাটকটি অশ্রাব্য ভাষার কারণে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলন নিয়ে লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরব গাথা’ প্রবন্ধে বিকৃতি ও শেখ হাসিনার নাম গোপন করার অভিযোগ ওঠায় সেটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।

অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, ওই প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করা হয়নি। অপরাধী ও দায়ীদের আড়াল করা হয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীরা বিকৃত ইতিহাস পাবে। এজন্য সংশোধনের প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার কথা বলা হয় যে, এ আন্দোলন ছিল স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে গদ্যের ভাষা সংশোধনের প্রস্তাব আসে—‘শাসক’ বদলে ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা’, ‘দুর্বৃত্তবাহিনী’র স্থলে ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা’র জায়গায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী’ ব্যবহার করার।

সভা সূত্র জানায়, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। কিছু লেখা ধর্মীয় অনুভূতি ও ভাষার কারণে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ইতিহাস উপস্থাপনে ভারসাম্য আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো পাঠ্যবইয়ে কোনো একক রাজনৈতিক নেতাকে কেন্দ্র করে ইতিহাস উপস্থাপন করা যাবে না। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্রে বড় ধরনের সংশোধন আনা হবে। প্রকাশকদের জানানো হয়েছে—ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত বিশেষণ ব্যবহার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত