ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

রিজার্ভ চুরিতে জড়িত ৫ দেশের নাগরিক: তদন্তে নতুন মোড়

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ আগস্ট ১৭ ১০:৩৬:২১
রিজার্ভ চুরিতে জড়িত ৫ দেশের নাগরিক: তদন্তে নতুন মোড়

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা দীর্ঘ তদন্তের পর নতুন মোড় নিয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিআইডি) জানিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়াও অন্তত চার দেশের নাগরিক এই চুরিতে জড়িত ছিল। মামলার চার্জশিট প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই আদালতে দাখিল করা হবে।

তদন্ত-সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের তৎকালীন কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গুরুতর গাফিলতি ছিল, যার মধ্যে কারও কারও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততাও ধরা পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র অত্যাধুনিক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে চুরি ঘটায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ সচেতনভাবে ওই ম্যালওয়্যারযুক্ত ফাইলটি খোলায় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অবৈধভাবে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়।

তিনি আরও জানান, চার্জশিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর বিস্তারিত প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এতে বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকবে। প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে এফবিআইকে অনুরোধ করা হয়েছে এবং তা হাতে পেলেই চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতের এই চুরি বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার ডাকাতির ঘটনা। সে সময় বাংলাদেশে ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটি চলছিল। হ্যাকাররা প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার স্থানান্তর করতে চেয়েছিল, তবে তারা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরাতে সক্ষম হয়।

চুরি হওয়া অর্থের বড় অংশ ফিলিপাইনের ক্যাসিনো শিল্পের গোপনীয়তা আইনের আওতায় পাচার হয়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইন এবং প্রায় ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। শ্রীলঙ্কা থেকে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধার জটিল হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার হয়েছে।

ঘটনার তদন্তে সিআইডির পাশাপাশি এফবিআই, ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এনবিআই) এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অংশ নিয়েছে। পরবর্তীতে জাতিসংঘকেও এ অপরাধের কৌশল ও লেনদেনের ধারা জানানো হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রায় নয় বছরের তদন্তে দেশি-বিদেশি শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, আইপি ঠিকানা, নেটওয়ার্ক লগ, ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং ড্রিডেক্স ম্যালওয়্যার কোডসহ বিস্তৃত প্রযুক্তিগত প্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

সিআইডির আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই তদন্তে আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধচক্রের কৌশল, দেশীয় সহযোগীদের ভূমিকা এবং সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। চার্জশিট এমনভাবে প্রস্তুত হবে যাতে অপরাধীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আইনের মুখোমুখি হয়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত