ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

৫ মেডিকেলে হবে নতুন বার্ন ইউনিট

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ১৬ ১২:১১:৪১
৫ মেডিকেলে হবে নতুন বার্ন ইউনিট

দেশে অগ্নিদুর্ঘটনার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোড়াজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাঁচটি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নতুন ভবনে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন করা হবে। যদিও প্রকল্পটি পুরোনো তবে এখনও কার্যকর হয়নি। বিশেষ করে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্প অনুমোদনের আগে সৌদি উন্নয়ন তহবিলের ঋণ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে নতুন নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংশোধনীর ফলে ব্যয় বেড়েছে ৩৬০ কোটি টাকা এবং মেয়াদ বাড়বে ৩ বছর। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন আনুমানিক ৬ বছর সময় লাগবে। আগামী রোববার এই প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন হবে। সভার সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল—সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর—এ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল ২০২ কোটি ১৬ লাখ এবং সৌদি ঋণ ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে ৮১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা অনুমোদিত ব্যয়ের ৭৮.৯৬ শতাংশ বেশি। নতুন হিসাব অনুযায়ী সরকারি তহবিল ৪৬৪ কোটি ৭৪ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ৩৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

প্রকল্প অনুমোদনের সময় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু না হওয়ায় মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পাঁচটি নির্বাচিত জেলা ও আশপাশের প্রায় ৬ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পোড়া ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সৌদি উন্নয়ন ফান্ডের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। একনেক ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প অনুমোদন দেয় এবং ২০২২ সালে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়। ঋণের শেষ সময় ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। করোনা মহামারির কারণে অনুমোদন বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত হয়।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেটের বিদ্যমান আইসিইউ ভবনের ওপর সম্প্রসারণ করে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হতো। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ তলা ভবনের ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলা সংস্কার করে ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। তবে রাজশাহীতে আইসিইউ ভবনের পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপনের সময় আইসিইউ ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ফলে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষায়িত ইউনিটের মাধ্যমে পোড়া রোগীদের আইসিইউ, এইচডিইউ এবং ডেডিকেটেড অপারেশন থিয়েটারসহ সব সুযোগ-সুবিধা এক জায়গায় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষের দেহের বিভিন্ন স্থানে পুড়ে যায় এবং ৫ হাজার ৬০০ জন মারা যান। জটিল পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ও জনবলের অভাবে মৃত্যু ও দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি এই ধরনের রোগীর জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল যা দেশের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

হাসপাতাল নির্বাচনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ২০২০-২০২৪ সালে ৫ হাজার ৪১৮ জন, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে ৯৫৮ জন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৪০৩ জন, রংপুর মেডিকেল কলেজে ২ হাজার ৮৮৮ জন এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ৮ হাজার ৭০০ জন পোড়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া সার্জারি বিভাগের আরও বিপুল রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাই আলাদা ভবন প্রয়োজন।

একনেকের কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাউয়ুম আরা বেগম বলেন, বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বাস্তবায়িত হলে ৬ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে, বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া কমবে এবং ঢাকায় পোড়াজনিত রোগীর চাপও হ্রাস পাবে। এই কারণেই সংশোধিত প্রস্তাব একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

তথ্য: যুগান্তর

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত