ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
স্বাস্থ্য খাতে সরঞ্জাম উৎপাদনে বড় ঘাটতি

দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির মোট চাহিদার মাত্র ৫-৭ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেডিকেল ডিভাইসেস অ্যান্ড সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স (বিএএমডিএসআইএমই) ।
সংগঠনের নেতাদের মতে, সম্ভাবনাময় এই খাত পরিকল্পনার অভাবে বিকাশ পাচ্ছে না। বর্তমানে দেশের ৮৫-৯০ শতাংশ মেডিকেল ডিভাইস বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে বিদেশি মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে।
রোববার রাজধানীর পরীবাগে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের (বিএইচআরএফ) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বিএএমডিএসআইএমই’র সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক।
মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির বাজারের বর্তমান আকার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবছর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্যখাতের অন্যতম বড় অংশ হিসেবে এই বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তার মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে শুধু স্থানীয় চাহিদা পূরণই নয়, বৈদেশিক বাজারেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ডায়াগনস্টিক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা ইমেজিং মেশিন, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, হাসপাতালে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম, সিরিঞ্জ, স্যালাইন সেট, সুরক্ষা পোশাক- আধুনিক চিকিৎসার জন্য এসব অপরিহার্য। কিন্তু এসবের ৮৫-৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থায় অস্থিরতা দেখা দিলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা সরাসরি হুমকির মুখে পড়ে। অথচ আমরা চাইলে অনেক পণ্য দেশে উৎপাদন করতে পারি।
সভায় জানানো হয়, দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্পের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে অপসো স্যালাইন এবং ১৯৯৯ সালে জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এর পর আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি সিরিঞ্জ, স্যালাইন সেট, রক্ত পরিবহন টিউব, পিপিইসহ নানা পণ্য ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
সভায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা শিল্পের অগ্রগতির পথে নানা বাধা তুলে ধরেন। তারা জানান, নীতি সহায়তার ঘাটতি, উৎপাদন উপযোগী কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, গবেষণা ও উদ্ভাবনে সীমিত বিনিয়োগ, খণ্ডিত বাজার কাঠামো, সঠিক পরিসংখ্যান ও তথ্যের অভাব এবং শুল্ক জালিয়াতির মতো সমস্যার কারণে দেশীয় উৎপাদন সীমিত হয়ে আছে। তাদের মতে, সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পদক্ষেপ নেয়, তবে বাংলাদেশ শুধু আমদানিনির্ভরতা কমাতেই সক্ষম হবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সভায় সংগঠনটি কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্পে কর অবকাশ (ট্যাক্স হলিডে) সুবিধা প্রদান, রপ্তানি প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ২০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ন্যূনতম ১০ বছর বহাল রাখা, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনে বিশেষায়িত পাঠ্যক্রম চালু, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও শল্যচিকিৎসা যন্ত্র খাতকে পৃথক শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নীতি সহায়তা প্রদান, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীনে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি, সরকারি ক্রয়ে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং দেশে উৎপাদনযোগ্য পণ্যের আমদানি বন্ধ করা, চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানিকারকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা চালু করা এবং দীর্ঘদিন ধরে নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সমন্বয় না হওয়ায় উৎপাদকরা যে ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত মূল্য সমন্বয় করা।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না বস্ত্র খাতের ১৩ কোম্পানি
- ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৭ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- সর্বোচ্চ উচ্চতায় ১৭ কোম্পানির শেয়ার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোম্পানির বাজিমাত
- রবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের মুখে গ্রামীণফোন
- শেখ সেলিমের ২১টি বিও অ্যাকাউন্ট ও ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
- ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে: বাগছাস
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- চলতি সপ্তাহে ৬ কোম্পানির ডিভিডেন্ড অনুমোদন
- ঢাবি ছাত্রদলের ব্যতিক্রমধর্মী মিছিল, শুধু হাততালি