ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তানে ঝুঁকছে বিদেশিরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের প্রভাব ইতোমধ্যেই ভারতের পোশাক রপ্তানিতে পড়েছে। উচ্চ শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো ভারত থেকে অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে বা বাতিল করছে এবং তুলনামূলক কম শুল্কপ্রাপ্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার দিকে ঝুঁকছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভারতের নিটওয়্যার শিল্পের কেন্দ্র তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুরের রপ্তানিকারকরা সরাসরি এই প্রভাব অনুভব করছেন। যারা আগে নিয়মিত মার্কিন বাজারে সরবরাহ করতেন তারা এখন নতুন অর্ডার পেতে দেরি করছেন বা অর্ডার অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। কিছু ক্রেতা অর্ডার স্থগিত রেখেছেন আবার কেউ কেউ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কাজ দিচ্ছেন যেখানে শুল্ক হার ভারত থেকে অনেক কম যা সাধারণত ১৯–৩৬ শতাংশের মধ্যে।
এক রপ্তানিকারক জানান, তার স্থায়ী মার্কিন চালান এখন পাকিস্তানে যাচ্ছে। আরেকজন বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা গ্রীষ্মকালীন অর্ডারের আগে অপেক্ষা করতে বলেছেন। নতুন শুল্ক কাঠামোয় মূল শুল্কের পাশাপাশি অতিরিক্ত জরিমানাও যুক্ত হয়েছে যা কিছু নিটওয়্যার পণ্যের ক্ষেত্রে ৬৪ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এতে ভারতীয় পণ্যের দাম আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি হয়ে পড়েছে।
প্রথমে এই শুল্ককে বড় ধাক্কা মনে করা হলেও এখন অনেকেই একে ‘বাণিজ্যিক অবরোধ’ বলছেন। বিশেষ করে তামিলনাড়ুর টেক্সটাইল শিল্প যখন মার্কিন অর্ডারের পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই নতুন শুল্ক চালু হলো। তিরুপ্পুর, কোয়েম্বাটুর ও কারুর শিল্পাঞ্চলে ১২ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন আর বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি রুপির পোশাক রপ্তানি হয়।
শুল্ক বৃদ্ধির আগে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ভেবেছিলেন যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও চীন-মিয়ানমারের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের চাহিদা বাড়বে। সেই আশায় নতুন যন্ত্রপাতিতেও বিনিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন মার্কিন শুল্কে সেই আশা এখন ভেঙে গেছে।
তিরুপ্পুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টিইএ) সভাপতি কে এম সুব্রাহ্মনিয়ান বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। আমরা যেখানে ৫ থেকে ৭ শতাংশ মুনাফায় কাজ করি সেখানে অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা ভাগাভাগি করা অসম্ভব। তিরুপ্পুর রপ্তানির ৩০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায় এবং ক্রেতারা ইতোমধ্যে আমাদের শুল্কের অংশ ভাগাভাগি করতে বলছে।’
তিনি বলেন, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্রেতারা কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্র্যান্ডের বাইরের ক্রেতারা দ্রুত সস্তা বিকল্প খুঁজে নিচ্ছে।
এটি শ্রমিকদের জন্য আশঙ্কাজনক কারণ টেক্সটাইল খাত সংকুচিত হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ধাক্কা লাগবে। আগামী কয়েক মাসে তিরুপ্পুর, কারু ও কোয়েম্বাটুরে ১ থেকে ২ লাখ শ্রমিকের চাকরি হারানোর ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে।
তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুর থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি রুপির নিটওয়্যার রপ্তানি হয়। এখানে ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, কস্টকোসহ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডদের জন্য পোশাক তৈরি হয়, যা ভারতের নিটওয়্যার রপ্তানির ৫৫ শতাংশেরও বেশি।
রপ্তানিকারকরা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করলেও মার্কিন শুল্কের কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, তুলা ও নিটওয়্যার পোশাকের মার্কিন অর্ডার ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
শুল্কের প্রভাব কেবল পোশাক খাতেই সীমাবদ্ধ নয়। হোম টেক্সটাইলের জন্য বিখ্যাত কোয়েম্বাটুর ও কারুর কারখানাগুলোতেও বিদেশি অর্ডার স্থগিত হয়েছে।
সাউদার্ন ইন্ডিয়া মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কে সেলভারাজু জানান, গ্রীষ্মকালীন বিছানার চাদর ও তোয়ালের অর্ডার স্থগিত ও বিলম্বিত হচ্ছে, যা সাধারণত অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘শুল্ক বৃদ্ধি ছাড়াও ভারতের তুলার ওপর ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং জিএসটি-সংক্রান্ত অসংগতির ফলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববাজারে আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে।’ পলিয়েস্টার কাঁচামালে ১৮ শতাংশ এবং সুতায় ১২ শতাংশ শুল্ক থাকলেও তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৫ শতাংশ যা রপ্তানির খরচে ৬-৭ শতাংশ অতিরিক্ত বাড়ায়।
এ ছাড়াও ব্রাজিল থেকে আমদানি করা তুলার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেলভারাজু দাবি করেন, ব্রাজিলের তুলা সবসময় মার্কিন মানদণ্ড পূরণ করতে পারে না। তিনি ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, মার্কিন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা তুলা থেকে তৈরি পোশাকের বিনিময়ে রপ্তানি চুক্তি করতে।
সুব্রাহ্মনিয়ান আরও বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা এমন শাস্তিমূলক মার্কিন শুল্কের মুখোমুখি হয়নি। বাংলাদেশ ৩৫-৩৬ শতাংশ (বর্তমানে শুল্কহার কমে ২০ শতাংশ) শুল্ক বহাল রেখেছে, পাকিস্তান ১৯ শতাংশে নামিয়েছে, ভিয়েতনাম ২০-২১ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া শুল্ক ১৯ শতাংশে নামিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের শুল্ক ৫০ শতাংশ যা নজিরবিহীন।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘মার্কিন বাজারে আমাদের মুনাফা ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এবং ক্রেতারা সস্তা বিকল্প খুঁজে নিচ্ছে। আমরা দ্রুত বাজার হারাতে পারি যদি শুল্ক ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকে।’
সেলভারাজু বলেন, ‘মার্কিন বাজার এখনও আমাদের পছন্দ করে, ভারতীয় মানও ভালো। কিন্তু রাজনৈতিক ও নীতিগত বাধাগুলো আমাদের পিছনে ফেলছে।’
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না বস্ত্র খাতের ১৩ কোম্পানি
- ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- সর্বোচ্চ উচ্চতায় ১৭ কোম্পানির শেয়ার
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৭ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোম্পানির বাজিমাত
- গেস্ট হাউজ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহ উদ্ধার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- রবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের মুখে গ্রামীণফোন
- ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে: বাগছাস
- শেখ সেলিমের ২১টি বিও অ্যাকাউন্ট ও ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
- অতর্কিত ঢাবি ও জবির ৪ শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা