ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২
ঢাকার শতভাগ শিশুর রক্তে বিষাক্ত সিসা, গবেষণায় উদ্বেগ
রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী প্রতিটি শিশুর রক্তে বিষাক্ত ভারী ধাতু সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে রয়েছে সিসার মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ যা গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
বিষয়টি উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায়।
বুধবার মহাখালীর আইসিডিডিআর’বির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধ : অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সভাটি। সেখানেই উত্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষকদের মতে, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশের লাখো শিশু স্থায়ীভাবে বুদ্ধিবিকাশজনিত সমস্যায় পড়তে পারে।
সভায় ঢাকায় পরিচালিত ২০২২ থেকে ২৪ সালের এক গবেষণার প্রাথমিক ফল তুলে ধরেন আইসিডিডিআর’বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা। তিনি বলেন, এই গবেষণায় ২ থেকে ৪ বছর বয়সি ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় প্রত্যেকের শরীরেই সিসা পাওয়া গেছে (মধ্যম মাত্রা ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটার)। ভয়াবহভাবে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিডিসির মানদণ্ড অনুসারে উদ্বেগজনক মাত্রার বেশি সিসা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম/লিটার) রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, সিসা একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছে। রক্তের মধ্যে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবনধারণ করছে।
গবেষণায় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, সিসানির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা, সিসা গলানোর কেন্দ্র এই দূষণের প্রধান উৎস। এ ছাড়া বাড়ির ভেতরে ধূমপান, ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী ও রান্নার পাত্র থেকেও শিশুদের শরীরে সিসা ঢুকছে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, রাজধানীর আশপাশে সিসানির্ভর কারখানার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা অন্যদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর’বির সাবেক পরিচালক স্টিভ লুবি বলেন, সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এর ফলে বুদ্ধিমত্তা ও শেখার ক্ষমতা কমে যায়। যা পরবর্তী প্রজন্মের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে যে বাতাস নিই, যে খাবার খাই, দূষিত মাটি বা ধূলিকণা স্পর্শ করি এবং এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্লাসেন্টা (গর্ভফুল) থেকেও সিসা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এই বহুবিধ উপায়ে সিসা প্রবেশ করে বলে এর থেকে বাঁচতে হলে এর মূল উৎসগুলো বন্ধ করা জরুরি।’
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, সিসা দূষণের প্রধান উৎস হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ব্যাটারি কারখানা, সিসাযুক্ত রং, প্রসাধনী ও রান্নার পাত্রের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
এ অবস্থায় এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন আইসিডিডিআর’বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সিসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে এবং পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকেই পিছিয়ে দেয়।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- নতুন মার্জিন নীতিতে কারা সুবিধা পাবেন, কারা হারাবেন?
- ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: কবে, কখন, কোথায়-যেভবে দেখবেন সরাসরি(LIVE)
- শেয়ারবাজারই হতে পারে ওষুধ শিল্পের নতুন প্রাণশক্তি: ডিএসই চেয়ারম্যান
- শেয়ারবাজারে নতুন মার্জিন বিধিমালা জারি করল বিএসইসি
- নিউজিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি দেখুন(LIVE)
- বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের ৬ কোম্পানির শেয়ারে ঝলক
- পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্তা
- ‘নো ডিভিডেন্ড’- এর বদনাম ঘুচাল বস্ত্র খাতের তিন কোম্পানি
- শিক্ষাবৃত্তি: প্রতি মাসে পাবে ৩ হাজার টাকা, আবেদন করবেন যেভাবে
- পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন? জানালেন গভর্নর
- পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণা নিয়ে যা জানালেন অর্থ উপদেষ্টা
- সাপোর্টের রেকর্ড মুনাফা, ১৫ বছরে সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড
- চলতি সপ্তাহে আসছে ৯ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ব্রাজিল বনাম হন্ডুরাস: ৭ গোলে শেষ হলো ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- চলতি সপ্তাহে আসছে ৪৪ কোম্পানির ইপিএস