ঢাকা, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

রিজার্ভের পরিমাণ প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৬ ২৩:২৫:৫২
রিজার্ভের পরিমাণ প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক

ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়তে থাকায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে রয়েছে। আইএমএফ এর হিসাব বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দায় বাদ দিয়ে যে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ পাওয়া যায়, সেটিই সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত মজুত হিসেবে ধরা হয়। তবে এর বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি অভ্যন্তরীণ হিসাব রয়েছে যা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নামে পরিচিত।

এই হিসাবে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাব এবং আঞ্চলিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম আকুর (ACU) বিল পরিশোধের জন্য সংরক্ষিত অর্থ বাদ দেওয়া হয়।

সূত্রগুলো জানায়, এই পদ্ধতিতে হিসাব করলে বর্তমানে দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো মজুদ রয়েছে। প্রতিমাসে আমদানি ব্যয় ধরা হলে যা গড়ে প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় নির্বাহ সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা থাকাই একটি দেশের জন্য নিরাপদ রিজার্ভ ধরা হয়।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুটি প্রধান খাত প্রবাসী আয় এবং পণ্য রপ্তানিতে সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে রিজার্ভের ওপর যে দীর্ঘদিন ধরে চাপ ছিল, তা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ১০ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আর কোনো ডলার বিক্রি করেনি, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা আরও জোরদার হয়েছে।

এরই মধ্যে দেশের ব্যাংক খাত, রাজস্ব প্রশাসন ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপের কারণে বাজেট সহায়তা ও ঋণ সহ কয়েক বিলিয়ন ডলার বিদেশি অর্থ সহায়তা দেশে আসছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে।

অন্যদিকে, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রিত থাকায় এবং রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ায় ডলারের চাহিদাও কমেছে। যার প্রভাবে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময়মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে ডলারের দাম অত্যধিক কমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিতের নজিরবিহীন অর্থপাচার ও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকা দর অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে। সংকটে মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে। ফলে আস্তে আস্তে তলানিতে নামে রিজার্ভ। ওই সময় রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফ এর কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চেয়ে ২০২২ সালের জুলাইতে আবেদন করে বাংলাদেশ।

মূলত চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফের কাছে এই ঋণ সহায়তা চায়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত