ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি, ফিরে দেখা ‘৩৬ জুলাই’

৫ আগস্ট ২০২৪ সকাল ৯টা। ঢাকার গণভবনের চারপাশে টানটান উত্তেজনা, চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা। বিশেষ বাহিনী স্পেশাল ফোর্সসহ সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘিরে রেখেছিলেন এলাকা। সড়কে বসানো ছিল কাঁটাতারের ব্যারিকেড, চলছিল কারফিউ।
আগের দিনগুলোতে গণভবনসংলগ্ন সড়কে আংশিক চলাচল থাকলেও ৫ আগস্ট সকাল থেকে পুরো এলাকাটিই সাধারণের জন্য অচল হয়ে পড়ে। তবে দুপুর নাগাদ হঠাৎই সেই কঠোর নিরাপত্তা শিথিল হতে শুরু করে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে উত্তরের পথে ঢাকামুখী হতে থাকেন লাখো মানুষ। সকাল ১০টা থেকে উত্তরা দিয়ে ঢুকতে থাকেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী। দুপুরের দিকে টেলিভিশনের স্ক্রলে ভেসে ওঠে সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। মুহূর্তেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
এ সময় একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন ত্যাগ করছেন এবং হেলিকপ্টারে উঠে পালিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাসের ঢেউ। রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। ছাত্র-জনতা গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে এগিয়ে যায়। একদফা দাবিতে চলা আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে শেখ হাসিনার সরকার পতনের মধ্য দিয়ে।
স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চালু ছিল। তবে এর হার ও গঠন সময়ের সঙ্গে বদলেছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কার্যকর ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০%, নারীদের জন্য ১০%, জেলাভিত্তিক ১০%, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫% এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১% সংরক্ষিত ছিল।
২০১৮ সালে দেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটাব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার যা পরিপত্র আকারে প্রকাশিত হয়।
এই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট রায়ে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে।
ওই রায়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-জনতা ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৯ জুন রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
প্রথম ৪০ দিন আন্দোলন তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ থাকলেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় তা সহিংস রূপ নেয়। মিছিল ভেঙে দেওয়া, গুলি, দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও।
শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ও সরকার পতনের মধ্য দিয়ে এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা বাস্তবায়িত হয়। কোটা সংস্কার নিশ্চিত হয় ঐতিহাসিকভাবে।
ফিরে দেখা ‘৩৬ জুলাই’:
১ জুলাই
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে নতুন প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ। গণপদযাত্রা, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু। বিক্ষোভ হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৪ জুলাই
আপিল বিভাগের শুনানিতে হাইকোর্টের রায় বহাল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর নিয়মিত আপিল করার পরামর্শ।
৬ জুলাই
দাবি আদায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আনুষ্ঠানিক নৈতিক সমর্থন জানায় বিএনপি।
৭ জুলাই
সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভ-অবরোধে অচল হয়ে যায় রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের।
৮ জুলাই
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা। ন্যূনতম কোটা রেখে সরকারি সব গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের। এদিন শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা দাবির পক্ষে স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘মেধাবীরা দিচ্ছে ডাক, কোটাপ্রথা নিপাত যাক’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’।
এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বল এখন সরকারের কোর্টে। এখন আর আদালত দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। সরকারই ঠিক করতে পারে, এই আন্দোলনের গতিপথ কী হবে।
৯ জুলাই
সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আবেদন।
১০ জুলাই
কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের।
সড়ক-মহাসড়কের সঙ্গে রেলপথেও শিক্ষার্থীদের অবরোধ, ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
১১ জুলাই
শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি, ব্যারিকেড ভেঙে সড়ক অবরোধ। কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের অনেকে আহত।
১২ জুলাই
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ। ১১ জুলাই শাহবাগে হাতাহাতির ঘটনায় অজ্ঞতপরিচয়দের আসামি করে পুলিশের মামলা।
১৩ জুলাই
মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কোটার সমাধান আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে।
১৪ জুলাই
কোটা বহালের পক্ষে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। এদিন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী নয়, যত রাজাকারের বাচ্চারা-নাতি-পুতি হলো মেধাবী, তাই না...? মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরাও (সরকারি চাকরি) পাবে না তাহলে রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?
শেখ হাসিনার এমন মন্তব্য ক্ষোভ আরও উসকে দেয়। প্রতিবাদে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মিছিল বের হয়। ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান উঠলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
১৫ জুলাই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। নিরীহ ছাত্রীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার ছবি আর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সাধারণ মানুষ। দেওয়ালে দেওয়ালে স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান দিয়ে গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়।
১৫ জুলাই দিনভর সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় তিনশ জন আহত হয়। হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
১৬ জুলাই
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল দায়ের। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনরকারীদের সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে ছয়জন নিহত। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। তার বুক পেতে দেওয়া ছবি হয়ে ওঠে জুলাই আন্দোলনের প্রতীক।
সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ, প্রত্যাখ্যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।
নিহতদের স্মরণে ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করার ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।
১৭ জুলাই
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় পুলিশের মামলা। কিন্তু প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার তথ্য গোপন করা হয়। নিহতদের স্মরণে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল বের হয়।
পুলিশি হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিন মিছিল পণ্ড। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে পরদিন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা শিক্ষার্থীদের।
এদিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত হন এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক।
১৮ জুলাই
সংস্কারের মাধ্যমে ২০ শতাংশ কোটা রাখার প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেয় সরকারের, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যাখ্যান। রাত ৯টা থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ।
আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ভবনে অবরুদ্ধ হন পুলিশ সদস্যরা, কয়েক ঘণ্টা পর হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ সরকারি আরও কিছু স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি, কাঁদানেগ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ।
উত্তরায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানি বিতরণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মীর মুগ্ধের ভিডিও এদিন ভাইরাল হয়।
১৯ জুলাই
ইন্টারনেট বন্ধের মধ্যেই সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গুলিতে আরও প্রাণহানি।
ঢাকায় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ। নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা, অস্ত্র লুট। আট শতাধিক কয়েদির পলায়ন।
নারায়ণগঞ্জে ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় সাড়ে ছয় বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপ। চারদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু।
প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার ক্ষমা প্রার্থনা, দুই মন্ত্রীর পদত্যাগসহ নয় দফা দাবিতে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের।
রাতে তিন মন্ত্রীর সঙ্গে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহর বৈঠক। সেখানে ৯ দফার পরিবর্তে আট দফা দাবি উত্থাপন ঘিরে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে মতভেদ।
কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে দিয়ে জোরপূর্বক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে, অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার। রাতে আন্দোলনের প্রধান মুখ নাহিদ ইসলাম ছাড়াও সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং আবু বাকের মজুমদারকেও গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। আটক করা হয় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে।
রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন। দুদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
২০ জুলাই
কারফিউয়ের মধ্যেও ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত চলে। বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হন।
নারায়ণগঞ্জে ঘরের বারান্দায় গুলি খেয়ে নিহত হন সুমাইয়া আক্তার। গুলিটি র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি রাখার ঘোষণা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের। সহিংসতায় বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।
২১ জুলাই
তুলে নেওয়ার একদিন পর ঢাকার পূর্বাচলে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে। তার শরীরে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন।
আপিল বিভাগের শুনানির পর কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ করার আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। তবে সরকার চাইলে বদলানোর সুযোগ রাখা হয়।
রায়ের পরও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় কারফিউ অব্যাহত থাকে, সাধারণ ছুটির আওতায় স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন বাহিনীর প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক।
২২ জুলাই
কারফিউ প্রত্যাহার, ইন্টারনেট চালুসহ চার দফা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন নাহিদ ইসলাম। সাধারণ ছুটির মেয়াদ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা আসে। কারফিউও বাড়ানো হয় এদিন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় চারদিনে অন্তত ১৩১ জন নিহত হওয়ার খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের খবর আসে। ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার মতবিনিময়, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ‘অকুণ্ঠ সমর্থন’ ঘোষণা। শেখ হাসিনা পালায় না, পালানোর গুজব প্রত্যাখ্যান করে ব্যবসায়ীদের সভায় বলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৩ জুলাই
রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে। পরদিন রাতে সারাদেশে বাসাবাড়িতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়।
আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ৯৩ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়ার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
২৪ জুলাই
তুলে নেওয়ার পাঁচদিন পর সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং আবু বাকের মজুমদারকে ঢাকার ভেতরে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়।
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে চিঠি দেয় ঢাকায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ১৩টি পশ্চিমা দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দূতাবাস।
এদিন অফিস-আদালত চালু হয়। কাজের সময় কমিয়ে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। তবে আগের মতোই বন্ধ ছিল মোবাইল ইন্টারনেট। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ গ্রেফতার হন।
২৫ জুলাই
মিরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জনগণের কাছে বিচার দাবি করেন তিনি। হতাহতদের ব্যাপারে খোঁজ না নিয়ে মেট্রোরেল পরিদর্শনে গিয়ে কাঁদায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন শেখ হাসিনা।
আন্দোলনে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘ।
হতাহত ও আটকদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে আইনবহির্ভূতভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করা হয় বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২৬ জুলাই
সমালোচনার মুখে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্ষয়-ক্ষতি পরিদর্শনে গিয়ে আবারও কাঁদেন। বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে নিজেদের রাজাকার হিসেবে পরিচিত করলো সবার কাছে।’
ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সারাদেশে গণগ্রেফতার অব্যাহত, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেড’ শুরু।
২৭ জুলাই
সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও তিন সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং আরিফ সোহেলকেও তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা পরিদর্শনে গিয়ে হামলার জন্য ‘বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করতে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
গ্রেফতারের পর ১৭ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে দড়ি দিয়ে বেঁধে আদালতে তোলার ছবি ভাইরাল হয়।
২৮ জুলাই
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে তুলে নেয় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। তৎকালীন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে ছয় সমন্বয়কের এক টেবিলে বসে খাওয়ার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।
ডিবির হেফাজতে থাকা ছয়জন সমন্বয়ক রাতে এক ভিডিওবার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তখন আত্মগোপনে থাকা সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এবং আব্দুল হান্নান মাসউদ।
জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহার করানোর প্রতিবাদে পরদিন সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আত্মগোপনে থাকা সমন্বয়করা।
কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। যদিও নিহতের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে বলে তখন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।
দশ দিন বন্ধ থাকার পর মোবাইল ইন্টারনেট ফের চালু হয়।
২৯ জুলাই
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। সমন্বয়কদের হয়রানির প্রতিবাদে আবারও রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা। সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে পরদিন সারাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের ঘোষণা সরকারের, কালো ব্যাজ ধারণের আহ্বান।
রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে কালোর পরিবর্তে সবাইকে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে অনলাইনে প্রচারের আহ্বান। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা এবং পুলিশি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়কের মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে আদালতে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মানজুর আল মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।
‘জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না,’ সমন্বয়কদের ধরে নিয়ে গিয়ে ডিবি কার্যালয়ে ভাত খাওয়ানোর ছবি প্রকাশের ঘটনায় মন্তব্য হাইকোর্টের।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যার প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেন মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, আইনজীবীসহ ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
৩০ জুলাই
সরকার সমর্থকদের কালো রঙের বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইলে লাল রঙের ছবি ও ফ্রেম ব্যবহার করে।
৩১ জুলাই
বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা। টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা
হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো ব্যানার-ফেস্টুন ও ডিজিটাল পোর্ট্রেট তৈরির আহ্বান।
আটক সহপাঠীদের মুক্তি না দিলে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের।
কোটা আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা।
ডিবিপ্রধানের পদ থেকে হারুন অর রশীদকে বদলি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার করা হয়।
দুপুর ২টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম পুনরায় চালু করে সরকার।
৩২ জুলাই (১ আগস্ট)
কোটা আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার।
নাহিদ ইসলামসহ ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে আটক থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তি দেওয়া হয়।
সহিংসতার ঘটনা তদন্তে সহযোগিতার জন্য ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ কমিটি পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্তে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি।
পরদিন প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৩৩ জুলাই (২ আগস্ট)
গণমিছিল কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আবারও সংঘর্ষ, পুলিশসহ অনেকে হতাহত হয়।
ডিবি কার্যালয়ে চাপপ্রয়োগ করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানান নাহিদ ইসলামসহ আন্দোলনকারী ছয় সমন্বয়ক।
হত্যার প্রতিবাদসহ পূর্বঘোষিত ৯ দফা দাবিতে ৩ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও ৪ আগস্ট থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন সমন্বয়করা।
এদিন দুপুর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কে আবারও বন্ধ করা হয় ফেসবুক ও টেলিগ্রাম। ফের চালু হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর।
রাতে গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
৩৪ জুলাই (৩ আগস্ট)
বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। ‘গুলি আর সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনো সংলাপ হয় না,’ বলেন সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শহীদ মিনারের লাখো মানুষের সমাবেশে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম।পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে জমায়েত কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ।
ঢাকায় সেনা সদরে বিভিন্ন স্তরের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। পরে আইএসপিআর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
৩৫ জুলাই (৪ আগস্ট)
অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশসহ শতাধিক মানুষ নিহত। সরকারি নির্দেশে মোবাইলে ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় অপারেটরগুলো।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার কেমন হবে, সেটির একটি রূপরেখা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শাহবাগে ব্যাপক জমায়েতের মধ্যে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুরুতে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ পালনের কথা থাকলেও পরে সেটি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করেন আন্দোলনের নেতারা।
সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট)
৫ আগস্ট সকালেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পুলিশের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকামুখী হন লাখ লাখ ছাত্র-জনতা। সকাল ১০টার পর থেকেই উত্তরা দিয়ে ঢাকায় ঢুকতে শুরু করে সহস্র মানুষ।
দুপুর নাগাদ শেখ হাসিনার পতনের কথা শোনা যায়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে সামরিক বিমানে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সারাদেশের মানুষ যেন নেমে আসে রাস্তায়। পথে পথে মানুষের উচ্ছ্বাস, আনন্দ মিছিল ছিল ঢাকাজুড়ে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব গঠন করা হবে।
এর মধ্যে দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে রুদ্ধশ্বাস এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের।
তথ্য: জাগোনিউজ২৪
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্র ও বহুজাতিক ১৫ কোম্পানি
- ভারতে ঢাবির দুই ছাত্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়, ক্ষোভ
- ১১'শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন
- ডিএনসিসির শিক্ষাবৃত্তি পাবে ২ হাজার শিক্ষার্থী
- স্কয়ার ফার্মার বাজার মূলধনে নতুন মাইলফলক
- শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৭ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৪ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- বিকালে আসছে ১০ কোম্পানির ইপিএস
- বিকালে আসছে ২১ কোম্পানির ইপিএস
- ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- নতুন সিনেট সদস্য হলেন ঢাবির ৫ অধ্যাপক
- শিবলী রুবাইয়াত ও শেখ শামসুদ্দিন শেয়ারবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ১২ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস