ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশের এইচএসসি পাস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির সমান

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের গড় জ্ঞান ও দক্ষতা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী মাত্র সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সমান।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর অন্তত ১১ বছরের মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে গড় শিক্ষার মেয়াদ মাত্র ৬.৫ বছর অর্থাৎ প্রায় ৪.৫ বছরের শেখার ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি শুধু শিক্ষার দৈর্ঘ্যে নয়, মানেও ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
আন্তর্জাতিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গড়ে ৩৬৮ স্কোর করছে। যেখানে ৩০০ স্কোর হলো ‘ন্যূনতম অর্জনের’ সীমা আর ৬২৫ স্কোরকে ধরা হয় ‘উন্নত অর্জন’। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মৌলিক পাঠ, গণিত ও বিশ্লেষণ দক্ষতায় পিছিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে কয়েকটি প্রধান কারণ- মুখস্থনির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন, বিশ্লেষণমূলক পাঠদানের অভাব, অপ্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিতহীন শিক্ষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনিনুর রশিদ বলেন, “ভর্তি পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে কারণ তারা শিখন ঘাটতি নিয়েই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে আসে।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ মন্তব্য করেন, “প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকরা অনেক সময়েই শিক্ষাদানে অনাগ্রহী ও প্রশিক্ষণহীন। ফলে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও গণিতে বিশেষভাবে দুর্বল থাকে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিনের মতে, “জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান থাকে না। গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে কারণ সেখানে দক্ষ শিক্ষকের অভাব প্রকট।”
এই শিখন ঘাটতির প্রভাব শুধু একাডেমিক নয় বরং জাতীয় উৎপাদনশীলতাতেও পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের মানবসম্পদ সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৫৭ দেশের মধ্যে ১০৬তম। চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতের শিশুদের উৎপাদনশীলতা সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবিত করণীয়- মুখস্থনির্ভরতা পরিহার করে বিশ্লেষণভিত্তিক শিক্ষা চালু, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও বেতন কাঠামোর উন্নয়ন, পাঠ্যবইয়ের বাইরের বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, জাতীয় মানদণ্ডে শিক্ষার গুণগত মূল্যায়ন চালু, গ্রামীণ শিক্ষায় বিনিয়োগ ও মেধাবী শিক্ষক আকৃষ্ট করা।
শিক্ষার মান কেবল পাশের হার দিয়ে নয় বরং শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার সামর্থ্য দিয়ে নির্ধারিত হওয়া উচিত। এখনই এই সংকট মোকাবেলায় পরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ভয়াবহ সমস্যার মুখে পড়তে পারে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
- ১১'শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন
- এক বহুজাতিকের ধাক্কায়ই কেঁপে উঠল শেয়ারবাজার
- চলতি সপ্তাহে আসছে ৬৫ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- ভারতে ঢাবির দুই ছাত্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়, ক্ষোভ
- সাত কোম্পানিতে বিনিয়োগ বেড়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের
- দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে ১৪ কোম্পানি
- ঢাবির হলে ধূমপায়ীদের সিট না দেওয়ার ঘোষণা; প্রশংসায় ভাসছেন প্রভোস্ট
- স্টক ডিভিডেন্ড পেল ৩ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ইপিএস প্রকাশ করার তারিখ জানাল ১৫ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স
- ডিএনসিসির শিক্ষাবৃত্তি পাবে ২ হাজার শিক্ষার্থী
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান
- ২৬ জুলাই : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর