ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষকের কক্ষে তালা

ডুয়া নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ জুলাই ৩১ ১৮:৫৮:১৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষকের কক্ষে তালা

জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান, ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার বৈধতা প্রদানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে তাদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে আওয়ামীপন্থী নীল দলের দুই শিক্ষক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান ও ড. সাদিক হাসানের কক্ষে তালা লাগিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদেরকে বিভাগ থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই ) দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিভাগে গিয়ে তাদের কক্ষে তালা লাগান এবং তাদেরকে সকল কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান এবং চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান। এসময় শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষকের কক্ষের দরজায় তাদের ছবিতে ‘আওয়ামীলীগের দালাল’ লিখে পোস্টার লাগিয়ে দেন। এবং দুইটি কক্ষকে ‘দালালের রুম’ বলে চিহ্নিত করেন।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান ও ড. সাদিক হাসানকে বিভাগের সকল একাডেমিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু বছর না পেরুতেই তারা নতুন ব্যাচের ক্লাস নিচ্ছেন। তাছাড়া, তাদেরকে বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের রিসার্স সুপারভাইজারেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যদিও ব্যাচটির শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বয়কট করেছিলেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ এখন আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কেন্দ্র। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সরাসরি বিরোধীতা করা অসংখ্য শিক্ষক বয়কট হওয়ার পরেও এক অদ্ভুত ক্ষমতাবলে এখনও ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নেয়, ডিপার্টমেন্টের সকল কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, নাম প্রস্তাব করা হয় ডীনস এওয়ার্ড কমিটিতে, বিশেষ সুবিধা দিতে দেওয়া হয় থিসিস সুপারভাইজারের দায়িত্বও।

তারা আরও বলেন, এর মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সাদিক হাসান। যিনি জুলাই আন্দোলনের সরাসরি বিরোধীতা তো করেছেনই আবার শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গিয়ে নীল দলের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হাসিনা কর্তৃক যে রাজাকার ট্যাগ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের সেখানে সাদিক হাসান স্বৈরাচার হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। শুধু অবস্থান নিয়েই থেমে থাকেননি ১৫ জুলাইয়ের নির্মম নৃসংসতম হামলায় আহত হয়ে যখন শিক্ষার্থীরা কাতরাচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের বিছানায়, তখন তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসিনা সরকার এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বলেন এইরকম আত্মঘাতী স্লোগান দিলে নাকি মার খাওয়াটা স্বাভাবিক ।

কিন্তু ৫ আগষ্ট হাসিনার পতনের পরও এক অসম্ভব ক্ষমতাবলে তিনি এখনও দোর্দন্ডপ্রতাপে বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচে ক্লাস নিচ্ছেন। এবারও তাকে তৃতীয় সেমিস্টারে কোর্স নিতে বলা হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীরা যখন তাকে বয়কটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তখন শিক্ষার্থীদের সিজিপিএ কমিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে তারা ভয় ও শিক্ষাজীবন নিয়ে আশংকার জন্য মুখও খুলতে চান না।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শুধু নিজের ডিপার্টমেন্ট নয়, অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এ জুলাই অভ্যুত্থান বিরোধী শিক্ষকদেরও অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসা হয় এই ডিপার্টমেন্ট এর কোর্স নিতে এর মধ্যে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের এহসানুল হক মুকুট, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শেখ শামস মুরসালিন অন্যতম। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে বয়কট হওয়া ফ্যাসিবাদের সরাসরি দোসরদের পুনর্বাসন করছেন লোক প্রশাসন বিভাগ৷

তাই এইরকম সরাসরি ফ্যাসিবাদের দোসর, যে এখনও নিজেকে ফ্যাসিবাদী শাসক হাসিনার পক্ষের লোক হিসেবে দাবী করে এমন শিক্ষকদের অবাধ বিচরণে বিভাগের জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা আজকে তাদের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেই। এই দুজন শিক্ষক যেন কখনো ডিপার্টমেন্টের কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারেন সে দাবি জানাই।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত