ঢাকা, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শনাক্তে টাঙানো হচ্ছে তালিকা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ২০ ১৯:৫৪:০৭
‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শনাক্তে টাঙানো হচ্ছে তালিকা

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তা চলমান। দায়িত্বকালীন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের কাজটি পুরোপুরি শেষ করতে না পারলেও অন্তত শুরু করে যতটা সম্ভব এগিয়ে নিতে চায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ লক্ষ্যে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের (ওই জেলা-উপজেলার) তালিকা টাঙানো হচ্ছে। এ তালিকা দেখে স্থানীয়রা নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে সরকারকে জানাতে পারবেন।

অনেকেই পরিসংখ্যানগত বিষয় না জেনেই বিভিন্ন রকমের সংবাদ ছাপাচ্ছে, যেমন এতজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে, এটা আছে, সেটা আছে। আমরা সেটা বলতে চাই না। আমরা নিয়মনিষ্ঠ ও আইন বিধি মেনে যাচাই-বাছাই করেই সঠিক তথ্যটা জানাবো, সেভাবেই কার্য পদ্ধতিগুলো নিরূপণ করছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম

বিগত সময়ে প্রণয়ন করা অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ অভিযোগ ফরম অনুযায়ী কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে ডিসি ও ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তি বা ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এ বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়।

বর্তমানে আড়াই লাখেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে যার মধ্যে বড় একটি অংশ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকারের সময়ে তালিকার নামে অসংখ‌্য অমুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ। দিন যত গড়িয়েছে বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ‌্যা। সুযোগ-সুবিধার লোভে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেকে। এ সুযোগে সরকারও অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অনেককে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে।

আমরা ডিসি ও ইউএনওদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা বের করতে বলেছি। এ তালিকা দেখে কারা মুক্তিযোদ্ধা নয় সেটা শনাক্ত করা সম্ভব হবে। কারণ স্থানীয়রাই বলতে পারবেন কে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন আর কে করেননি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার অমুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল করার বিষয়টি একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে চাচ্ছে। এ সরকারের আর সময় আছে সর্বোচ্চ আট মাসের মতো। এ সময়ের মধ্যে হয়তো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না, তবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিলের প্রক্রিয়াটি শুরু করা যাবে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিতকরণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মামলাজটকে দেখছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাজারো মামলা থাকলেও সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ বা ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে এক নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নতুন আবেদন যাচাইয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা পরিচালনা করছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তথ্য বাতায়নে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা স্থানীয় প্রশাসনের অফিসের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে স্থানীয়রা সহজেই যাচাই-বাছাই করতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট তালিকা দেখে যদি কারও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে অভিযোগ পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) জানান, তালিকা যাচাই-বাছাই সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, তবে তাদের বাদ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি তালিকা তৈরি করতে চাই, যা সত্যনিষ্ঠ এবং নির্ভরযোগ্য।

তিনি আরও জানান, নবগঠিত জামুকা ইতোমধ্যে অনেক মামলার নিষ্পত্তি করেছে, যার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আবেদনই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে বয়স কম থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে তালিকা টাঙিয়ে রাখার মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং অমুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা সহজ হবে। স্থানীয়রাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, বলেন তিনি।

ভিত্তিহীন অভিযোগে আইনি ব্যবস্থাঅভিযোগ যাচাইকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অনেক অভিযোগই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক। এ ধরনের অভিযোগের কারণে যেমন সরকারি সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে, তেমনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও অপ্রয়োজনীয় হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৯৮তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন নির্দোষ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ থেকে বিরত থাকেন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত