ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার: এশিয়ার দ্বিতীয় নিকৃষ্ট পারফর্মার

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে এশিয়ার ফ্রন্টিয়ার মার্কেটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম পারফর্মারে পরিণত হয়েছে। এই সময়ে প্রধান সূচক কমেছে এবং কোনো নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি।
আলোচ্য সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৭৮ পয়েন্ট বা ৭.২৫ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৮৩৮-এ নেমে এসেছে। বাজার মূলধন ৮.১ শতাংশ কমেছে। ব্লু-চিপ ডিএস৩০ সূচক ১২৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮১৬-তে দাঁড়িয়েছে এবং শরীয়াহ-ভিত্তিক ডিএসইএস সূচক ১০৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬১-তে নেমে এসেছে।
প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের গড় দৈনিক লেনদেন ৩.৮৪ বিলিয়ন টাকায় নেমে এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কম। গত এক বছরে মূল বাজার বা এসএমই বাজারে একটিও আইপিও (Initial Public Offering) তালিকাভুক্ত হয়নি, যা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি।
বিআরএসি ইএলএল স্টক ব্রোকারেজের মতে, নতুন কমিশন বর্তমানে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলার উপর জোর দিচ্ছে, তাই আইপিওকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পতনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ সুদ হার, কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস, চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নেতিবাচক ইক্যুইটির উত্তরাধিকার। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন শুল্ক আরোপ এবং ভারত-পাকিস্তান ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলোও বাংলাদেশের বাজারের উপর প্রভাব ফেলেছে। ১০টি ব্যাংকের আর্থিক দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ায় ব্যাংকিং খাত ৮.৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড ৪.২০ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেশি।
এদেকে, বাংলাদেশ ব্যাংকও সমস্যাগ্রস্ত ২০টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত বা তরল করার পরিকল্পনা করছে। ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা হলো বাজারে পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য ইক্যুইটির অভাব।
যদিও বাজার বর্তমানে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ব্র্যাক ইএলএল স্টকব্রোকারেজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে এবং বাজার-চালিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পর বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীলতা দেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি প্রকাশের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশা জাগাচ্ছে।
মরগান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) তাদের মে ২০২৫ সালের পর্যালোচনায় বাংলাদেশের বাজারের জন্য কোনো পরিবর্তন আনেনি। অর্থাৎ বাজার এখনও "বিশেষ চিকিৎসার" অধীনে রয়েছে। এছাড়া, মে মাস পর্যন্ত ২৪টি ডিএসই কোম্পানি এফটিএসই ফ্রন্টিয়ার ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এশিয়ান ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটাল (এএফসি) চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উপর ভিত্তি করে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ভালো ট্র্যাক রেকর্ডের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। নতুন কমিশন ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে এবং তালিকাভুক্তির বিষয়ে স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাথে বৈঠক করেছে, যা ভবিষ্যতে বাজারে নতুন কোম্পানি আসার সুযোগ তৈরি করবে এবং এর ফলে একটি প্রাণবন্ত সেকেন্ডারি বাজার গড়ে উঠবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- আট কোম্পানির উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে ৮০ শতাংশের বেশি শেয়ার
- খোঁজ মিলছে না আয়াতুল্লাহ খামেনির!
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১১০ কোটি টাকার খেলাপি গ্রাহক গ্রেপ্তার
- ঢাবির হলে প্রকাশ্যে ধূমপানে ২০০ টাকা জরিমানার ঘোষণা
- প্রাতিষ্ঠানিকদের দখলে ৮ কোম্পানি: ৪০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ
- ১০ শতাংশ শেয়ারও নেই ৮ কোম্পানির উদ্যেক্তা-পরিচালকদের
- সরকারি চাকরিতে আসছে অবসরের নতুন নিয়ম
- এক কোম্পানির যাদুতেই শেয়ারবাজারে উত্থান!
- ‘র’-এর ৬ এজেন্ট গ্রেপ্তার
- রেকর্ড দামে তিন প্রতিষ্ঠান: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তিন কোম্পানি
- ২১ বস্ত্র কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা নজরকাড়া তলানিতে
- শেয়ারবাজারের ৯ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
- রেকর্ড তলানিতে তিন কোম্পানির শেয়ার: বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
- পদোন্নতি পাবেন না যেসব সরকারি কর্মকর্তারা