ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকার পাশাপাশি ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে ৩ জেলা

ডুয়া নিউজ- স্বাস্থ্য
২০২৫ জুন ১৮ ১৮:৪৯:১৩
ঢাকার পাশাপাশি ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে ৩ জেলা

রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি জেলা এবার ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য প্রকাশিত কীটতাত্ত্বিক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে এডিস মশার ঘনত্ব উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। একই ধরনের পরিস্থিতি রাজধানীর বাইরেও দেখা যাচ্ছে—বিশেষ করে ঝিনাইদহ, মাগুরা ও পিরোজপুর পৌরসভায় এডিসবাহিত পাত্রের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

জরিপ অনুযায়ী, এসব এলাকায় ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করেছে।

বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার কীটতাত্ত্বিক জরিপ ২০২৪-২৫’ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জরিপ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলে তা ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকির সংকেত হিসেবে ধরা হয়। আইইডিসিআরের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌরসভায় এ সূচক দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে, মাগুরায় ৫৫.৫৬ শতাংশে এবং পিরোজপুরে ঠিক ২০ শতাংশে। এছাড়া পটুয়াখালী পৌরসভাতেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেখানে ব্রুটো ইনডেক্স পৌঁছেছে ১৯.২৬ শতাংশে। এটা ঝুঁকির মাত্রার কাছাকাছি।

জরিপে আরও দেখা যায়, ঝিনাইদহে ২৭০টি বাড়ির মধ্যে ১৬২টি পাত্রে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। মাগুরায় একই সংখ্যক বাড়িতে শনাক্ত হয়েছে ১৫০টি পজিটিভ পাত্র, পিরোজপুরে ৫৪টি এবং পটুয়াখালীতে ৫২টি পাত্রে লার্ভা মিলেছে।

এ বিষয়ে ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, “ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার ঘনত্ব অত্যধিক। ঝিনাইদহ শহরে ২৭০টি বাড়ি ঘুরে ১৬২টিতেই লার্ভা পাওয়া গেছে, যা থেকে ৬০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স হিসেব করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত উচ্চঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।”

তিনি আরও বলেন, "পিরোজপুর ও মাগুরার বেশির ভাগ এলাকায় এডিস অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে, যেগুলো গ্রামীণ অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী।"

ডা. তাহমিনা জানান, 'প্লাস্টিক ড্রাম, দইয়ের পাত্র এবং প্লাস্টিকের ঝুড়িতে লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।'

অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া। জরিপে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ব্রুটো ইনডেক্স ৫.৬২ শতাংশ, বরিশালে ২.৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪.৭৯ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ায় ৭.৮৭ শতাংশে রয়েছে।

তবে রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতিও মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। এখানেও ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়ে গেছে যথেষ্ট উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ডা. তাহমিনা জানান, "ঢাকায় ৫৮.৮৮ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা গত বছরের ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ৭২টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্ধারিত সূচকের চেয়ে বেশি, যার মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ডকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।"

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে তা মহামারির রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ ও মাগুরার উচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক ও কার্যকর হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় সরকার, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

এ অবস্থায় সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে জনগণের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত