ঢাকা, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

ইরানকে হারানো প্রায় অসম্ভব, রয়েছে সাত কারণ

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ১৮ ১১:২৭:২৯
ইরানকে হারানো প্রায় অসম্ভব, রয়েছে সাত কারণ

ইসরায়েল কখনো ভাবেনি মধ্যপ্রাচ্যকে কব্জায় নেওয়ার স্বপ্নে ইরানের শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। পারমাণবিক কার্যক্রম ঠেকাতে হামলা শুরু করে ইসরায়েল কিন্তু ইরানের জবাবে তেলআবিবের কিছু অংশ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে দেখে গাজা ভেবে ভুল হতেই পারে। পাল্টা হামলায় ইরানেরও ক্ষতি হয়েছে তবে এর পরও একে পরাস্ত করা যে সহজ নয়—তা একেবারে স্পষ্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের ভেতরে এমন কিছু কৌশলগত শক্তি রয়েছে যা দেশটিকে অজেয় করে রেখেছে বহু বছর ধরে। নিচে তুলে ধরা হলো অন্তত সাতটি কারণ যা ইরানকে যুদ্ধে ভয়ানক প্রতিপক্ষ হিসেবে গড়ে তুলেছে।

১. হরমুজ প্রণালি: কৌশলগত এক চাবিকাঠি

ইরানের দক্ষিণে হরমুজ প্রণালি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন পথ। মাত্র ৩৩ কিলোমিটার চওড়া এই জলপথ দিয়ে বিশ্ব তেলের প্রায় ২০ শতাংশ যায়। এই অঞ্চল ঘিরে থাকা সাতটি দ্বীপ ইরানের নিয়ন্ত্রণে ফলে যেকোনো মুহূর্তে এই পথ বন্ধ করে দিতে পারে তারা—যা বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

২. তিন মহাদেশের মিলনস্থল

ইরান এমন এক ভূখণ্ডে অবস্থিত যা ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার সংযোগস্থল। একইসঙ্গে উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগর ঘিরে রেখেছে দেশটিকে। ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে বিগত শতাব্দীগুলোতে বহু পরাশক্তি একে দখল করতে চাইলেও সফল হয়নি।

৩. পাহাড় ও মরুভূমির প্রাকৃতিক দুর্গ

ইরান একটি প্রাকৃতিক দুর্গ। পশ্চিম ও দক্ষিণে জাগরোস পর্বতমালা এবং উত্তরে আলবোর্জ পাহাড় ইরানকে ঘিরে রেখেছে সুরক্ষার দেয়াল হিসেবে। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ভয়ংকর লুত মরুভূমি। কেউ পাহাড় পার হলেও এই গরম ও জনশূন্য মরুভূমি পাড়ি দিয়ে অগ্রসর হওয়া প্রায় অসম্ভব।

৪. মাটির নিচে খনিজের আধার

ইরান তেল ও গ্যাস মজুদের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। বিশ্ব রিজার্ভের ১০% তেল এবং ১৫% প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে ইরানের অধীনে। এই সম্পদ কেবল তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা দেয় না বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও একধরনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

৫. রাশিয়া ও চীনের সমর্থন

ইরান দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছে। এসব দেশের নীরব সমর্থন ইরানকে পশ্চিমা চাপে মাথা না নোয়াতে সাহস জুগিয়েছে। ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সময়ও রাশিয়ার গোয়েন্দা সহায়তা বা কৌশলগত সমর্থন পেয়ে থাকে তেহরান।

৬. ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সক্ষমতা

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যভেদে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ভাষ্য মতে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার সবচেয়ে বিস্তৃত ও শক্তিশালী। এ ছাড়া সাশ্রয়ী কিন্তু ভয়ংকর কার্যকর ড্রোন তৈরি করে রাশিয়া থেকে শুরু করে নানা দেশকে চমকে দিয়েছে ইরান।

৭. ছায়াযুদ্ধের জাল

ইরান সরাসরি না লড়ে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দক্ষতায় পারদর্শী। ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্টেন্স’ নামে পরিচিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়। হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি, ফাতেমিয়ুন ব্রিগেডসহ এসব গোষ্ঠী ইরানের হয়ে মাঠে লড়াই করে এবং শত্রুপক্ষকে চাপে রাখে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত