ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২
দেশের ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি দেশের ব্যাংক খাতের লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রকাশ করেছে, যা উদ্বেগজনকভাবে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বা ২৪.১৩ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, মাত্র দশটি ব্যাংকেই প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুঞ্জীভূত হয়েছে।
খেলাপি ঋণ উর্ধ্বগতির কারণ
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিগত সরকারের সময়ে অনিয়ম-জালিয়াতির শীর্ষে থাকা ব্যাংকগুলোই এই বিশাল খেলাপি ঋণের পেছনে দায়ী। সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংকে একক আধিপত্য বিস্তার করে নামে-বেনামে নানা উপায়ে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও, গত ৫ আগস্টের আগে টাকা ফেরত না দিয়েও ঋণ নিয়মিত দেখানোর যে ব্যবস্থা ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ হঠাৎ করে লাফিয়ে বাড়ছে। এই নীতিগত পরিবর্তনগুলোই লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের চিত্রকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
খেলাপি ঋণের শীর্ষে যেসব ব্যাংক
পরিমাণের দিক থেকে খেলাপি ঋণে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট ৯৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭০ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা এখন খেলাপি, যা মোট ঋণের ৭৪.৭৮ শতাংশ। জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপ ও এস আলমের বিশাল ঋণ রয়েছে, এছাড়াও ক্রিসেন্ট লেদার, অ্যানটেক্স, বিসমিল্লাহসহ বিভিন্ন বড় জালিয়াতির ঘটনা এই ব্যাংকেই ঘটেছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ এখন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের, যেখানে এস আলম গ্রুপের জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের ৪৭ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বা ২৭.৩৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি দেখানো হয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, যার ২৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ৪১.৪১ শতাংশ ঋণ খেলাপি। এছাড়া, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকও শীর্ষ ১০ খেলাপি ঋণের তালিকায় রয়েছে।
এছাড়াও, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও উচ্চ আনুপাতিক হারে খেলাপি ঋণের সম্মুখীন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে তা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে।
সংকটের মূল কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে নীতিগত সুবিধা ও তথ্য গোপনের সুযোগ দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ অনেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পুনঃতপশিল, ঋণ পুনর্গঠন এবং এমনকি ঋণ ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর সুবিধা দেওয়া হয়।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘লাল তালিকা’য় ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- ভালুকায় প্রথম পাঁচতারা হোটেল চালু করছে বেস্ট হোল্ডিংস
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার