ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২
৫ জীবন বীমা কোম্পানির ওপর বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানির আর্থিক সংকট, বিলম্বিত দাবি নিষ্পত্তি এবং পলিসিহোল্ডারদের আস্থা হ্রাসের তদন্তে বিশেষ নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো: সানলাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রোটেকটিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বাইরা লাইফ এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
গত সোমবার কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে নিরীক্ষার বিষয় জানানো হয়েছে। নিরীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো কেন এই কোম্পানিগুলো পলিসিহোল্ডারদের দাবি নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তার কারণ খুঁজে বের করা। এছাড়াও, জীবন তহবিল কেন খারাপ হচ্ছে, প্রিমিয়াম আয় কেন কমছে, পলিসি ল্যাপস কেন বাড়ছে এবং এই সংস্থাগুলোর সম্পদ কেন হ্রাস পাচ্ছে, তা খুঁজে বের করাও নিরীক্ষার লক্ষ্য। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ নিতে চাইছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জীবন বীমা খাত বিলম্বিত দাবি নিষ্পত্তি এবং দুর্বল গ্রাহক সেবার জন্য সমালোচিত হয়েছে। ইডরা জানিয়েছে, এই নিরীক্ষা জীবন বীমা খাতের অদক্ষতা দূরীকরণ এবং অনিয়ম ও দুর্বলতা চিহ্নিত করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যা নিশ্চিত করবে যে কোম্পানিগুলো পলিসিহোল্ডারদের তহবিল সঠিকভাবে পরিচালনা করছে।
ইডরা আরও বলেছে, জীবন তহবিলের অবনতি এবং প্রিমিয়াম আয় কমার পাশাপাশি অনেক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরও জানিয়েছে, অদক্ষ বিনিয়োগ কৌশল এবং দুর্বল পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনাও তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
ইডরায় জমা দেওয়া অনিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের ৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানির সম্মিলিত সম্পদ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা বেশি। ৩৬টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যতীত সবাই তাদের তথ্য জমা দিয়েছে।
ইডরার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২১টি কোম্পানির সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৩টির হ্রাস পেয়েছে এবং নব-লাইসেন্সপ্রাপ্ত শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদ স্থিতিশীল ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্পদের সামগ্রিক বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা নির্দেশ করে। কিন্তু কিছু কোম্পানির দুর্বল কর্মক্ষমতা এবং তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব সুশাসন ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে উদ্বেগ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, উচ্চ পরিচালন ব্যয় এবং বিলম্বিত দাবি নিষ্পত্তির কারণে সম্পদ বৃদ্ধিতে ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এজেন্টদের উচ্চ কমিশন, দুর্বল প্রশাসনিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং তীব্র বাজার প্রতিযোগিতা সম্পদ ক্ষয়ের কারণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিচক্ষণ বিনিয়োগ কৌশল, কঠোর ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং দ্রুত দাবি নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- লাভেলোর শেয়ার কারসাজি: তিন বিও অ্যাকাউন্টের লেনদেন স্থগিত
- সরকারের সিদ্ধান্তে ডুবছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন?
- ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড কার্যকারিতায় বিএসইসির নতুন উদ্যোগ
- একাদশে ভর্তি: চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ
- শেয়ারবাজারে প্রতারণা ঠেকাতে মাঠে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা
- শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক মুনাফা চান? জেনে নিন ৫ মন্ত্র
- আরএসআই বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত পাঁচ শেয়ারে
- মালিকানায় পরিবর্তন আসছে ইয়াকিন পলিমারের
- ডিভিডেন্ড বৃদ্ধির আলোচনায় জ্বালানি খাতের ১১ কোম্পানি
- এক শেয়ারের জোরেই সবুজে ফিরল শেয়ারবাজার
- ডিভিডেন্ড দোলাচলে তথ্যপ্রযুক্তির ৮ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- শেয়ার কারসাজিতে শ্যালক–দুলাভাইর দেড় কোটি টাকা জরিমানা
- চার কোম্পানির আর্থিক অনিয়মের দায়ে নিষিদ্ধ হচ্ছে ৬ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান
- রেকর্ড ডেটে শেয়ার লেনদেন চালুর পরিকল্পনা ডিএসইর
- ধস কাটিয়ে অবশেষে শেয়ারবাজারে উত্থানের স্রোত