ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

সামরিক শক্তিতে কার অবস্থান শক্তিশালী, ইরান না ইসরায়েল?

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ১৫ ১৭:০২:১২
সামরিক শক্তিতে কার অবস্থান শক্তিশালী, ইরান না ইসরায়েল?

মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জর্জরিত। এই অঞ্চলের দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে কেন্দ্র করেই সামরিক কৌশল সাজিয়ে আসছে। উভয় দেশই নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে ব্যস্ত রয়েছে। ফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠে— সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে কার অবস্থান শক্তিশালী, ইরান না ইসরায়েল?

সামরিক সক্ষমতায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে র‍্যাংকিংয়ে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।

চলুন সামরিক শক্তির দিক থেকে দুই দেশের তুলনামূলক চিত্র দেখে নিই।

সামরিক জনবল ও কাঠামো

ইরান: সক্রিয় সেনা রয়েছে প্রায় ৬ লাখের বেশি, এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল রিজার্ভ ফোর্স এবং ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)।

ইসরায়েল: তুলনামূলক কম সক্রিয় সৈন্য প্রায় ১.৭ লাখ হলেও রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে ৪.৬ লাখ।

ইরানের সংখ্যা বেশি হলেও, ইসরায়েল প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা এবং প্রতিক্রিয়া দক্ষতায় অনেক এগিয়ে।

বিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তি

ইরান: প্রায় ৫৫০টির মতো যুদ্ধবিমান থাকলেও অনেকগুলোই পুরনো মডেলের।

ইসরায়েল: অত্যাধুনিক F-35, F-16 এবং F-15 যুদ্ধবিমান-সহ আধুনিক রাডার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী।

Iron Dome, David’s Sling এবং Arrow System এর মতো উন্নত এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তি ইসরায়েলের অন্যতম হাতিয়ার।

ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন প্রযুক্তি

ইরান: ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক থেকে খুবই শক্তিশালী। তাদের কাছে রয়েছে মধ্য ও দীর্ঘ পাল্লার হাজার হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত ড্রোন।

ইসরায়েল: ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে। Jericho সিরিজের ব্যালিস্টিক মিসাইলসহ রয়েছে অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক শিল্ড।

ইরানের আক্রমণাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির বিপরীতে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য।

নৌ ও সাবমেরিন শক্তি

ইরান: বৃহৎ নৌবাহিনী রয়েছে। প্রায় ১৯টি সাবমেরিন ও বিভিন্ন ধরনের ফ্রিগেট ও কোরভেট রয়েছে।

ইসরায়েল: নৌবাহিনী ছোট হলেও রয়েছে অত্যাধুনিক Dolphin Class সাবমেরিন, যা পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।

সামরিক বাজেট ও প্রযুক্তি সহায়তা

ইরান: বার্ষিক সামরিক বাজেট প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ইসরায়েল: বাজেট ২৪ বিলিয়ন ডলার, যার বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি সহায়তা হিসেবে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক ও সামরিক সহযোগিতা ইসরায়েলকে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়ে রেখেছে।

সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সক্ষমতা

ইসরায়েল: বিশ্বসেরা সাইবার ইউনিট "Unit 8200" রয়েছে।

ইরান: আক্রমণাত্মক সাইবার অপারেশনে দক্ষ হলেও প্রতিরক্ষায় দুর্বলতা রয়েছে।

পারমাণবিক শক্তি

সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)'র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরুতে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে।

দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল।

এই তালিকায় ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই ছিল না।

গত কয়েক বছরে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম মজুদের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার তাদের প্রতিবেদনে কোনো দেশের হাতে কতটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, সে তথ্য উল্লেখ করেনি। তারা জানিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রধারিত ক্ষমতাকে তারা এই রিপোর্টে মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেনি।

সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে সংখ্যাগত এবং পরিসরের ভিত্তিতে ইরান এগিয়ে থাকলেও, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং নির্ভুল হামলার দক্ষতায় ইসরায়েল অনেক বেশি অগ্রসর। ইরানের সামরিক শক্তির মূল দিক আক্রমণাত্মক কৌশলে হলেও, ইসরায়েলের শক্তি গড়ে উঠেছে সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা, নিখুঁত লক্ষ্যভেদ এবং আধুনিক কমান্ড সিস্টেমের ওপর।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত