ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী পাঠায় যেসব দেশ

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুন ০৫ ২২:২১:১৯
মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী পাঠায় যেসব দেশ

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে সমবেত হন। এই বিশাল ধর্মীয় জমায়েতের পেছনে থাকে একটি নির্দিষ্ট কোটার হিসাব, যা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী সৌদি আরব নির্ধারণ করে। প্রতি ১০ লাখ মুসলমানের জন্য ১ হাজার হজযাত্রীর অনুমতি, এই নিয়ম অনুসরণ করেই প্রতি বছর নির্ধারিত হয় কোন দেশ থেকে কতজন মানুষ হজ পালনের সুযোগ পাবেন।

২০২৫ সালে হজযাত্রীর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার এই দেশটি সর্বোচ্চ কোটা—২ লাখ ২১ হাজার—পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭ শতাংশ মুসলমান, ফলে হজের চাহিদাও সেখানে বিশাল। তবে, কোটা বেশি হলেও ইন্দোনেশীয়দের হজে যেতে হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর; কখনো কখনো ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় হজের জন্য। সেসঙ্গে যুক্ত আছে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষাও।

দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান, যেখান থেকে এবার হজে গিয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ। দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২২ কোটির ওপরে হওয়ায় কোটা তুলনামূলকভাবে বেশি। এরপরই রয়েছে ভারত, যেখান থেকে হজে অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার জন। দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ কোটির কাছাকাছি হলেও হজে যাওয়ার খরচ বহনের জন্য আগে সরকারি ভর্তুকি থাকলেও তা বর্তমানে বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে এবার হজে গিয়েছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। দেশের মুসলিম জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনাতেই হজযাত্রীরা অংশ নেন। প্রতি বছর বাংলাদেশের হজ কার্যক্রম এক ধরনের মহাযজ্ঞে পরিণত হয়।

আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী পাঠায় নাইজেরিয়া, যেখান থেকে এবার গিয়েছেন ৯৫ হাজার মুসলমান। তাদের মুসলিম জনসংখ্যাও প্রায় ৯৫ মিলিয়নের কাছাকাছি। শিয়াপন্থী দেশ ইরান থেকেও এবার হজে অংশ নিয়েছেন ৮৭ হাজার ৫৫০ জন। সৌদি-ইরান সম্পর্কে নানা উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও হজ ব্যবস্থাপনায় উভয় দেশ পারস্পরিক সমঝোতা রক্ষা করে চলেছে।

এছাড়াও, আলজেরিয়া, তুরস্ক, মিসর ও সুদান থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান প্রতি বছর হজে অংশ নেন। আলজেরিয়া থেকে গিয়েছেন ৪১ হাজারের বেশি, তুরস্ক থেকে প্রায় ৩৮ হাজার, মিসর থেকে ৩৫ হাজারেরও বেশি এবং সুদান থেকে প্রায় ৩২ হাজার মুসলমান পবিত্র হজ পালন করছেন।

প্রতিটি দেশের হজযাত্রা দীর্ঘ প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও প্রতীক্ষার ফসল। মুসলমানদের জন্য এটি শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়—বরং আবেগ, আত্মত্যাগ ও আধ্যাত্মিক তীব্রতার এক অনন্য সমাবেশ। হজ কোটা সীমিত হলেও মুসলিম বিশ্বে এই পবিত্র সফর বরাবরই সবচেয়ে আরাধ্য ও সম্মানের বিষয় হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু ভ্রমণ নয়—বরং কোটি মুসলমানের জীবনে বিশ্বাস, প্রস্তুতি ও প্রার্থনার এক স্মরণীয় অধ্যায়, যা আজীবন হৃদয়ে গেঁথে থাকে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত