ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
১২০০ শিক্ষক চাকরিচ্যুত; পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ
ইউনিসেফের তহবিল সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ১ হাজার ২০০ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল ইউনিসেফ। সংস্থাটির অর্থায়নে দেশীয় কয়েকটি এনজিও ‘লার্নিং সেন্টার’ পরিচালনা করত।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষক শিক্ষাদান করছেন, যাদের মধ্যে ৪ হাজার বাঙালি এবং ৪ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ১ হাজার ২০০ বাঙালি শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়, যেটি সম্পূর্ণ বিনা নোটিশে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রোববার উখিয়া ও টেকনাফে বিক্ষোভ করেন চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা।
এদিকে তহবিল সংকটে ইউনিসেফের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় ৪ লাখ শিশু-কিশোরের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যদি দ্রুত নতুন অর্থায়ন নিশ্চিত না হয়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, "ইউনিসেফ তাদের তহবিল সংকটের কারণে ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টার চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পে ৪ লাখের মতো শিক্ষার্থী আছে। আর প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২০০ বাঙালি শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে। অন্যদের বেতন পরিশোধ করার মতো অবস্থায় ইউনিসেফ নেই। বাকি শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে চাকরিচ্যুতির বিষয় জানানো হবে। বিষয়টি নিয়ে ইউনিসেফ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তহবিল না পেলে এই সংকট থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় দেখছি না।"
মিজানুর রহমান আরও বলেন, "রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লার্নিং স্কুলে মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুসরণ করে পড়ানো হয়। সাধারণত বাঙালি শিক্ষকরা ইংরেজি পড়ান। কারও চাকরি চলে যাচ্ছে, এটা তার পরিবার এমনকি আমাদের জন্যও দুঃখজনক।" এদিকে গতকাল শনিবার উখিয়া শহীদ মিনার চত্বরে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে এবং পুনর্বহালের দাবিতে দিনভর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, "রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা—উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অর্থ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে শুধুমাত্র স্থানীয় ১ হাজার ২৫০ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা শিক্ষকরা আগের মতোই কর্মরত রয়েছেন।"
চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা আরও জানান, "পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আরও প্রায় ৩ হাজার শিক্ষকের ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এভাবে বৈষম্যমূলকভাবে শিক্ষক ছাঁটাই চলতে থাকলে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা কোনো এনজিও বা আন্তর্জাতিক সংস্থার গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।"
এ বিষয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, "রোহিঙ্গা শিক্ষকরা যদি কাজ করতে পারেন তাহলে আমরা কেন পারব না? শুধু আমাদেরই চাকরিচ্যুত করা হলো। এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না।"
মাস পাঁচেক আগে বেতন বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন করার কারণ তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, "ইউনিসেফের অর্থায়নে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এনজিও ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা প্রকল্পটি বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়টি ইউনিসেফ চিঠিযোগে সরকারকে অবহিত করেছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চালানোর অর্থ তাদের রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে দুইদিন ধরে শিক্ষকরা প্রতিবাদ করছেন।"
এক শিক্ষক বলেন, "কোনো নোটিশ ছাড়া হঠাৎ চাকরি হারানোয় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার চুক্তি ছিল।"
আজ রবিবার (০১ মে) ইউনিসেফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, "রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় ইউনিসেফ যে কার্যক্রম চালায়, তার তহবিল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে শরণার্থী শিবিরগুলোর ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ওপর। এসব শিক্ষার্থী ইউনিসেফ সহায়তাপুষ্ট শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াশোনা করে।"
গতকাল শনিবার ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলছে, "নতুন তহবিল গঠন এবং নতুন করে কার্যক্রম সাজানোর ‘নিরলস প্রচেষ্টা’ চালানোর পরও তহবিল সংকটের কারণে সংস্থাটিকে কিছু ‘কষ্টদায়ক’ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের সহায়তা স্থগিত করার মতো বিষয়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ১ হাজার ১৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের সঙ্গে ইউনিসেফের চুক্তি শেষ হবে। এই স্বেচ্ছাসেবকরা মূলত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য।"
ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, "শিক্ষা কেন্দ্রগুলো চলতি জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এরপর এসব কেন্দ্র খোলার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করবে নতুন তহবিল পাওয়ার ওপর।"
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড ২য় T-20: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখুন এখানে
- শীতকালীন ছুটি বহাল থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড ২য় টি-টোয়েন্টি: কবে, কোথায়, কখন-দেখুন সময়সূচি
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের ফাইনাল টি-২০ ম্যাচ: সরাসরি দেখুন এখানে(LIVE)
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড ২য় T-20-সরাসরি দেখার উপায়
- আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মুখোমুখি বাংলাদেশ, জেনে নিন সময়সূচি
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: ৩য় টি-২০ ম্যাচটি শেষ, জানুন ফলাফল
- ভূমিকম্প: আবারও ৪.২ মাত্রার কম্পন
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের ৩য় ম্যাচ: কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন সরাসরি
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: ব্যাটিংয়ে টাইগাররা-সামনে চ্যালেঞ্জিং স্কোর-LIVE
- ভয়াবহ ভূমিকম্প: কম্পন ৬ মাত্রার
- দেশে ফের মধ্যরাতে ভূমিকম্প অনুভূত
- ঢাকা বোর্ডে এইচএসসির বৃত্তির তালিকা প্রকাশ, দেখুন তালিকা
- পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ত্রিদেশীয় টি-২০: সরাসরি দেখবেন যেভাবে