ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারের ৯ ব্যাংক এমডিবিহীন, নেতৃত্ব সংকট তীব্র

২০২৫ মে ২৪ ০৯:২৫:৪৭
শেয়ারবাজারের ৯ ব্যাংক এমডিবিহীন, নেতৃত্ব সংকট তীব্র

ডুয়া নিউজ: শেয়ারাবাজারে বর্তমানে ব্যাংক খাতে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে ৯ ব্যাংকে নেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এসব ব্যাংকের মধ্যে ৬টির এমডিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ৩টি ব্যাংকে এমডি পদত্যাগ করেছেন বা মেয়াদ শেষে পদ শূন্য রয়েছে। আর একটি ব্যাংকের এমডি পদে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যে ৯ ব্যাংকে নেই এমডি, সেগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। এরমধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এমডি পদে ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কেন সংকটে পড়েছে এই ব্যাংকগুলো?

দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডিকে ছুটিতে পাঠানো হয়, আবার কেউ কেউ পদত্যাগ করেন। কিছু ব্যাংকে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত

বর্তমান সংকটে এসব ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ঋণ বিতরণ ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা মোকাবিলা করছে। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক এমডি নিয়োগে নতুন নীতিমালা চালু করেছে, যার আওতায় অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত সুনাম যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে অযোগ্য ও বিতর্কিত প্রার্থীদের নিয়োগের সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে।

আগামীতে আরও পরিবর্তন আসছে

ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ণ ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের বর্তমান এমডিদের মেয়াদ আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে আরও কিছু এমডি পদ শূন্য হতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, বর্তমানে যারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের অনেকেই যোগ্য। ধাপে ধাপে তাদের মধ্য থেকেই স্থায়ী এমডি নির্বাচন করা হবে।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংক খাতে যে অপ্রতুলতা ও দুর্নীতির চিত্র দেখা গেছে, তা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সময়ে ব্যাংক খাতে যে নজিরবিহীন লুটপাট ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে এনেছে।

বর্তমান ব্যাংক খাতে প্রধান সমস্যা সমূহ হলো

১. খেলাপি ঋণের অপ্রতিরোধ্য বৃদ্ধি: ঋণের পরিমাণ ও খেলাপির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক সুস্থতা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

২. ঋণ বিতরণে সক্ষমতার হ্রাস ও ধীরগতি: ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারিয়েছে বা সক্ষমতা কমে গেছে, যার ফলে অর্থনীতির চাকা ধীরে চলছে।

৩. নিট আয় কমে যাওয়া: ব্যাংকগুলোর আয়ের উৎস কমে যাওয়ায় তারা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে।

৪. মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতার অভাব: প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধন না থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না।

এ সমস্যা মোকাবেলায় কিছু ব্যাংক সক্ষমতার সঙ্গে এগিয়ে গেলেও অনেক ব্যাংক একীভূত হওয়ার পথে হাঁটছে। সরকারের উদ্যোগে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কার ও আইন পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে, যা ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে চায়।

সার্বিকভাবে এ সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলো দেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এর মাধ্যমে সতর্কতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম পুনরাবৃত্তি না হয়।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে