ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিএনপি সমাধান দেখছে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপেই

২০২৫ মে ২৪ ১০:০২:৩৮
বিএনপি সমাধান দেখছে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপেই

ডুয়া ডেস্ক: বিএনপি মনে করছে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। দলটির নেতাদের মতে রাখাইন সংকটে মানবিক করিডর গঠন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ, ছয় উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি এবং জুলাই অভ্যুত্থান-পন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ—এসব ইস্যু মিলিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এই অস্থিরতা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হিসেবে বিএনপি দ্রুত একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার ওপর জোর দিচ্ছে। নেতারা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার আলোকে জুনের মধ্যেই যদি একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচন পরিকল্পনা প্রকাশ করা যায়। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটাই কেটে যাবে।

এ লক্ষ্যে বিএনপি মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত দুই দিন ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি দলের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকও হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই একটি বড় পরিসরের বৈঠক হতে পারে। অনেক মিত্র দল বিএনপিকে একটি কনভেনশন আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছে। এতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক অন্যান্য দলগুলোকেও যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। কনভেনশনের মূল উদ্দেশ্য হবে—একসাথে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তোলা।

সূত্র আরও জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎ হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে কয়েকবার চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। ঐ সাক্ষাতে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি লিখিত প্রস্তাব দেয়ার পরিকল্পনা ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে। দলটি পুনরায় দাবি জানায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাওয়া হলেও তারাও সাক্ষাৎ পায়নি বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাই না। জাতীয় নির্বাচনের কথা বললে তারা সময় লাগবে বলছেন। কত সময় লাগবে? ডিসেম্বর না জুন- পরিষ্কার করতে হবে।’

গত বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি অবস্থান জানানো হয়। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় বিএনপির পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। একই দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক সংকট দূর করার একমাত্র পথ হচ্ছে অতিদ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এখানে অন্য কথা বলে লাভ নেই। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।’

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নতুন করে সংবিধান লেখা, গণভোট, জুলাই সনদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। বড় বিভক্তি দেখা দেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষের ইস্যুতে দলগুলোর বিভেদ সংকটের মূল কারণ। নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সার্চ কমিটি গঠনের মাধমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সেই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছে এনসিপি। শুধু তাই নয়, জুলাই সনদও চায় দলটি। জামায়াত এই জুলাই সনদের তৈরিতে গণভোট দাবি করেছে। বিএনপির প্রশ্ন- দেশে তো ১৯৭১ সালের একটি সনদ বা ঘোষণাপত্র আছে। তা হলে একটি সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কেন সনদ করতে হবে? দেশে এর আগে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস, ৯০-এর ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। তখন তো সনদ নিয়ে কথা হয়নি। তাদের মতে, এসব সনদের মূল উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধকে মুছে দেওয়া; যার মাধ্যমে ’৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া। এমন কিছুর সঙ্গে বিএনপি থাকবে না।

নেতারা আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় নির্বাচন, মব জাস্টিসসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, সেনাপ্রধান যা বলেছেন, তা জনগণের মনের কথা। তার এই বক্তব্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা বিএনপি একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিল। বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমর্থন পাওয়ার পর দলটি এখন আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে। গত বুধবার সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে নাটকীয় পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ফলে দ্রুত নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপি এখন সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছে। বিশেষ করে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ ইস্যুতে বড় শক্তি দেখিয়েছে দলটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি যে দাবি আদায়ে সক্ষম, গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক আন্দোলনে সেই অবস্থান জানান দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিজয় হিসেবে হাইকোর্ট একটি রিট খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ইশরাকের শপথে কোনো বাধা নেই। এর ফলে সরকার একটি ধাক্কা খেয়েছে। পাশাপাশি এনসিপির ওপরও রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা গেছে, যাতে নির্বাচন পেছাতে ভবিষ্যতে তারা আর কোনো ইস্যু সামনে না আনে।

রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিদের মতে বিএনপির বর্তমান অবস্থান অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তার ইঙ্গিত বহন করে। তাদের যুক্তি বিএনপির নেতারা আগে থেকেই সন্দেহ করছিলেন সরকারের অভ্যন্তরে ও বাইরে কিছু গোষ্ঠী জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পরিকল্পনায় সক্রিয়। এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে এনসিপির যোগাযোগ রয়েছে বলেও তারা মনে করেন। এ কারণে ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি কৌশলগতভাবে একই সময়ে সরকার ও এনসিপির ওপর চাপ সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে