ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দ্রব্যমূল্যের আগুনে জনপ্রিয়তা খুইয়ে চাপের মুখে ট্রাম্প

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১৮:২১:২২

দ্রব্যমূল্যের আগুনে জনপ্রিয়তা খুইয়ে চাপের মুখে ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে কড়া বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ নাগরিকদের নিত্যব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে তার জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে—যা বাইডেন আমলের চ্যালেঞ্জেরই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

নির্বাচনের আগে নানা অঙ্গীকার দিলেও ট্রাম্প মূলত একই সমস্যায় আটকে গেছেন, যেটি পূর্বসূরি জো বাইডেনকেও ভোগাতে হয়েছিল—দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি। একবার মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা শুরু হলে তা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না, আর মার্কিন ভোক্তারা ব্যয়ের অতিরিক্ত চাপ মোটেও ভালোভাবে নেয় না।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্প কিছু সিদ্ধান্তে বাইডেনের ভুলও পুনরাবৃত্তি করছেন—যেমন ঘরোয়া বাজারে মূল্যবৃদ্ধির চাপকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়া এবং কর্মসংস্থান তৈরির মূল ভরসা হিসেবে করপোরেট বিনিয়োগকে সামনে আনা। অথচ এগুলো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান, যা তাৎক্ষণিক স্বস্তি দিতে পারে না।

সম্প্রতি ট্রাম্প দাবি করেছেন, দেশে শক্তিশালী বিনিয়োগ প্রবাহ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে, এবং জ্বালানির তুলনামূলক কম দামই দেখাচ্ছে যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন—বহু প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে, বিশেষ করে ট্রাম্প-আরোপিত শুল্কের আওতাধীন আমদানি পণ্যগুলোর দাম এখনও আগের তুলনায় বেশি।

বাইডেন আমলে একসময় নয় শতাংশে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতি কমে তিন শতাংশে নেমে এলেও খাবারদাবারের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—গরুর মাংসে প্রায় ১৫ শতাংশ, কলায় ৭ শতাংশ এবং কফিতে ২০ শতাংশের বেশি ব্যয় বাড়ছে। সরঞ্জাম ও হার্ডওয়্যারের দাম গত বছরের তুলনায় ৬.২ শতাংশ বেশি, দুই বছরে যা সর্বোচ্চ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী, বিশেষ করে পেপার টাওয়েলের দামও সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেড়েছে।

ক্রমবর্ধমান জনঅসন্তোষ এখন ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। রয়টার্স/ইপসোস জরিপ অনুযায়ী, তার কর্মক্ষমতায় সন্তুষ্ট মাত্র ৩৮ শতাংশ মার্কিনি—এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বনিম্ন সমর্থন।

ভোক্তা সন্তুষ্টির অন্যান্য সূচকও নিম্নমুখী। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজিউমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স নভেম্বর মাসে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। স্বাধীন ভোটারদের মধ্যেও হতাশা রেকর্ড পর্যায়ে, এমনকি রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে।

থ্যাঙ্কসগিভিং উপলক্ষে মার্কিনিদের খরচ বাড়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আমেরিকান ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশন জানায়, চলতি বছর আগের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম ব্যয় করতে পারে পরিবারগুলো, কারণ মিষ্টি আলু, ফ্রোজেন পিস, তাজা সবজিসহ বহু খাদ্যদ্রব্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি।

গত বছর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জনঅসন্তোষ ট্রাম্পকে নির্বাচনী সুবিধা দিয়েছিল। তবে চলতি মাসের অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পরাজয় দেখাচ্ছে, সেই সমর্থন এখন আর আগের মতো নেই।

২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে জনমত ফেরাতে ট্রাম্প আগামী কয়েক মাসে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য সফরে বের হবেন। তার প্রশাসনের দাবি, ওভারটাইম, টিপস ও সোশ্যাল সিকিউরিটির ওপর কর কমানো, ওষুধের দাম হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার মতো উদ্যোগ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে। লাস ভেগাস সফরেও তিনি টিপসের ওপর কর হ্রাসের কথাই তুলে ধরতে পারেন।

হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প বিশ্বাস করেন তার অর্থনৈতিক মডেল কার্যকর। প্রথম মেয়াদে ফল মিলেছিল, এবারও ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

এমজে/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত