ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: এক সপ্তাহে আরও ২০ বার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১৫:৪৬:১৮

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: এক সপ্তাহে আরও ২০ বার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক :ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী এবং একটি ঢাকায়। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে একটি এবং শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনের বিভিন্ন সময়ে তিনটি ভূমিকম্প ঘটে, যা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থলটি ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে, যা ঝাঁকুনির তীব্রতা বাড়ায়। এ দিনটির ভূমিকম্পকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তীব্র ঝাঁকুনিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কেঁপে ওঠে। এ ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত এবং ৬ শতাধিক মানুষ আহত হন।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন একটি গোপন ফল্ট শনাক্ত হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ফল্টের কারণে বাংলাদেশে ৯ মাত্রার বড় ভূমিকম্পও ঘটতে পারে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী জানিয়েছেন, দুই দিনে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় আগামী এক সপ্তাহে আরও ২০ বার ভূকম্পন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, নরসিংদী এই ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল। ৫.৭ মাত্রার চেয়েও বড় কোনো ভূমিকম্প ঘটলে স্বল্প সময়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারত, ইউরেশিয়া ও বার্মা—এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রুবাইয়াত কবির জানিয়েছেন, প্লেটগুলো এখন আটকানো অবস্থায় থেকে মুক্ত হচ্ছে। যদি ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়, তবে বাংলাদেশ মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে পড়বে।

২০১৬ সালে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ‘মেগাথার্স্ট ফল্ট’ শনাক্ত হয়, যা পললস্তরের নিচে মাইলজুড়ে বিস্তৃত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট সংযোগস্থলে গত ৮০০–১০০০ বছরে জমে থাকা শক্তি মুক্ত হয়নি। এ অঞ্চল ‘রিং অব ফায়ার’-এর মতো বিপজ্জনক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ ঘোড়াশালের ফল্ট থেকে মাটি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছে। সাবেক অধ্যাপক আ. স. ম. ওবায়দুল্লাহ জানান, নমুনা পরীক্ষা করে ভূমিকম্পের গভীরতা ও প্রকৃতি নিশ্চিত করা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনে ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উপরে উঠে আসে। বর্তমানে সেখানে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে। প্লেট চলাচল অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত