ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

যে কারণে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

২০২৫ নভেম্বর ১৮ ২১:২৪:১৯

যে কারণে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক খাতের সার্বিক বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশঙ্কা করছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও পবিত্র রমজান মাসের কারণে ভোক্তা চাহিদা সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংক আশা করছে, নিয়ন্ত্রিত নীতি সুদ হার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি বাজারে অতিরিক্ত ঋণগ্রহণের প্রবণতা সীমিত করবে।

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যালোচনা করে নভেম্বরের শুরুতে অনুষ্ঠিত মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, চিফ ইকোনমিস্ট ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম।

সভায় দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাতের ঋণ ও তারল্য পরিস্থিতি, আসন্ন রমজান ও জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব, বৈদেশিক খাতের প্রবণতা, এবং মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বিশেষভাবে মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এমপিসি এটিকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। তবে কিছু অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহজনিত সমস্যা, বিশেষ করে চাল ও তেলের বাজারে সাময়িক মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, আন্তঃব্যাংক কলমানি ও রেপো রেট সামান্য হ্রাস পেয়েছে। সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে সুদের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে, যা ব্যাংকিং খাতে স্বস্তি এনেছে। তবে বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির গতি এখনও ধীর। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে ঋণের চাহিদা সাময়িকভাবে কমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ।

বৈদেশিক খাতের প্রেক্ষাপটেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাঝারি হলেও আমদানি বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে জরুরি পণ্যের এলসি মার্জিন শিথিল করা হয়েছে, যার ফলে আমদানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলে কমিটি মনে করছে। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ গতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থাও স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আবহাওয়াজনিত কারণে আমন ধানের সম্ভাব্য ক্ষতি, জাতীয় নির্বাচন ও সম্ভাব্য নতুন বেতন কাঠামোর কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে পারে।

উপরিউক্ত সব দিক বিবেচনা করে কমিটি নীতি সুদহার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে এসডিএফ হার ৮ শতাংশ এবং এসএলএফ হার ১১.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এমপিসি আরও জানিয়েছে, প্রকৃত নীতিগত সুদহার ৩ শতাংশে পৌঁছানো পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে, যাতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

কমিটির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, নীতি সুদ অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত মূলত বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আগামী নির্বাচনের প্রভাব ও রমজান মাসে চাহিদা বৃদ্ধি সামলানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা ও বৈদেশিক খাতের প্রবণতার ওপর নজর রাখা হবে যাতে মুদ্রানীতি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

এমজে/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত