ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে শেখ হাসিনার রায়

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৮:১৪:২৬

বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে শেখ হাসিনার রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক :বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায় বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রধান সংবাদমাধ্যম এ রায় প্রকাশ করেছে এবং অনেকেই ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচারও করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, বিচারপ্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে তারা বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অনেক গণমাধ্যম হাসিনার বিচার নিয়ে তার অসন্তুষ্টি, আপত্তি এবং মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনার বক্তব্যও তুলে ধরেছে।

সোমবার সকাল থেকেই বিবিসি, আল-জাজিরা, ডয়েচে ভেলেসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম অনলাইনে বিষয়টি লাইভ প্রচার করেছে। আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে জানিয়েছে, এই রায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। রয়টার্স আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, রায়ের ফলে দেশে নতুন অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি তারা আদালত চত্বরে আনন্দ প্রকাশের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে।

রুশ গণমাধ্যম আরটি জানায়, গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে অনুপস্থিতিতেই হাসিনার বিচার ও দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। রায়ের আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিক্ষোভের খবরও তারা প্রকাশ করে।

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রতিক্রিয়া স্থান পেয়েছে। কামাল রায়কে অসাংবিধানিক দাবি করে জানিয়েছেন, ভারত এ রায়কে গুরুত্ব দেবে না এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চাপ প্রতিহত করবে।

এএফপির প্রতিবেদনে প্রধান বিচারকের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত রায়ের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরা হয়েছে। তাদের বরাতে বলা হয়েছে, এ রায়ের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনার ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় ক্ষীণ হয়ে গেছে। রায়কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার ঘটনাও তারা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।

এপি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অপসারিত হাসিনার রায় ঘোষণার আগে রাজধানীতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এছাড়া ভারত থেকে পাঠানো হাসিনার প্রতিক্রিয়াও তারা প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের ডন, জিও নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ‘আসন্ন নির্বাচন’-এর প্রেক্ষাপটে এই রায়কে বিশেষভাবে আলোচিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে। অভিযোগের বিভিন্ন দিক ও মামলার সময়কালও তারা বিশদভাবে প্রকাশ করেছে।

সিএনএন এ রায়কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার একটি হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রা, পারিবারিক ইতিহাস এবং ক্ষমতায় ফেরার ঘটনাবহুল পথচলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রকাশ করেছে।

ভারতের এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দুসহ সব প্রধান সংবাদমাধ্যম রায়টিকে প্রধান খবর হিসেবে প্রচার করেছে। তারা রায়ের আগে ও পরে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া, এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতীয় অবস্থানও বিশ্লেষণ করেছে।

এছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সরকারপ্রধানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার খবর গুরুত্ব পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এ রায়কে ঘিরে বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নতুন অস্থিরতার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত