ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিবাহবার্ষিকী ও মৃত্যুদণ্ড: ইতিহাসের এক অমোঘ মিলন

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৬:৪১:২৩

বিবাহবার্ষিকী ও মৃত্যুদণ্ড: ইতিহাসের এক অমোঘ মিলন

নিজস্ব প্রতিবেদক :সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জুলাই–অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। রায় ঘোষণার দিনটি শেখ হাসিনার বিবাহবার্ষিকীর সঙ্গে মিলেছে, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অপ্রত্যাশিত মিলন হিসেবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা করেছে। প্যানেলের অন্যান্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায় ঘোষণার সময় আদালত জনাকীর্ণ ছিল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন নিহতদের পরিবার, আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা।

আদালতে প্রদর্শন করা হয়েছে ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া এবং রংপুরে আন্দোলন দমনের সময় হত্যার ভিডিও ও তথ্যপ্রমাণ। গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টও উপস্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা এবং তথ্যমন্ত্রী ইনুর ফোনালাপের তথ্যও আদালতে প্রমাণ হিসেবে শোনানো হয়েছে, যা রায়ের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে।

মামলার অন্য দুই আসামি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এক অভিযোগে আসাদুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে, আর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আল-মামুনকে অ্যাপ্রুভার হিসেবে রাজসাক্ষী হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থান এবং আন্দোলন দমন সংক্রান্ত এই মামলাটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত এবং সংবেদনশীল বিষয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সালে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে যাত্রা শুরু করে। সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ভিত্তিতে।

রায় ঘোষণার দিনটি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে মিলেছে। ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ার সময় পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ আলী মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের পর ২০০৯ সালের ৯ মে ড. এম এ ওয়াজেদ আলী মৃত্যুবরণ করেন।

রায় দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। এটি রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বিভাজন আরও বাড়াতে পারে। কিছু মানবাধিকার সংগঠন এবং আন্দোলন সমর্থকরা রায়কে অন্যায় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। রায় ঘোষণার পর দেশের আইন অনুযায়ী আসামিদের আপিল করার সুযোগ থাকবে। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই রায়ের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

জাতীয় এর অন্যান্য সংবাদ