ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২

পদত্যাগের পরও অফিস করছেন রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান!

২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৪:১৫:২০

পদত্যাগের পরও অফিস করছেন রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিন্ডিকেট ও মন্ত্রণালয়ের প্রভাবের কারণে কাজের স্বাধীনতা হারানোর অভিযোগে গত রোববার (৯ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম। কিন্তু ঘোষণার পাঁচ দিন পার হলেও তিনি এখনো সংস্থার চেয়ারম্যানের মতোই অফিস করছেন, ব্যবহার করছেন রেড ক্রিসেন্টের সরকারি গাড়ি ও পতাকা।

বৃহস্পতিবার সকালে মগবাজারের রেড ক্রিসেন্ট প্রধান কার্যালয়ে নিজ দফতরে উপস্থিত হন আজিজুল ইসলাম। সকাল ৯টার পর তিনি প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে অবস্থান করেন। পরে চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দ গাড়িতে শ্যামলীর একটি সেমিনারে অংশ নিতে যান গাড়ির সামনে তখনো রেড ক্রিসেন্টের পতাকা উড়ছিল।

সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, “স্যার সকালে অফিসে আসেন, কিছুক্ষণ থেকে আবার সেমিনারে যান। অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেছেন।” এই আচরণে রেড ক্রিসেন্টে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, পদত্যাগ ঘোষণার পরও অফিস করা ও সুবিধা ভোগ করা অনুচিত।

এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তিনি নাটক করছেন। সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কিনা, সেটিও পরিষ্কার নয়।”

গত মার্চে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মেজর জেনারেল (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। তবে দায়িত্ব গ্রহণের অল্প সময় পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ওঠে স্বেচ্ছাচারিতা, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য, নিয়ম ভেঙে বোর্ড মিটিং করা ও কর্মকর্তাদের মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ। এসব নিয়ে সংস্থার ভেতরে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানসহ চার সদস্য পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রণালয় চেয়ারম্যানকে অপসারণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

এ অবস্থায় গত রোববার বিকেলে মগবাজারের রেড ক্রিসেন্ট ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে আজিজুল ইসলাম পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমি রেড ক্রিসেন্টকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ১০০ কোটি টাকার দেনা পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ও বাহ্যিক হস্তক্ষেপের কারণে কার্যক্রম এগোতে পারছিলাম না, তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড সদস্য রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) শাহে আলম, ডা. শেখ জাফর ও অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউসুফ।

তবে তার পদত্যাগের পেছনে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের চাপ ও অভ্যন্তরীণ সংকট এমনটাই বলছেন সংস্থার সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, আজিজুল ইসলামের আগাম পদত্যাগ ছিল আসন্ন অপসারণ এড়ানোর কৌশল।

তবে আজিজুল ইসলাম দাবি করেন, “আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের সুযোগ পাচ্ছিলাম না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেই আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, তিনি কি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানিয়েছি, এখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেব।”

কিন্তু পাঁচ দিন পরও সেই পদত্যাগপত্র কোথায় জমা হয়েছে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়েও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত