ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

ধ্বংসের শহরে শিশুর আর্তনাদ, আর ই’সরাইল পার্লামেন্টে মৃ’ত্যুর উল্লাস

২০২৫ নভেম্বর ১০ ১৭:০৯:৩২

ধ্বংসের শহরে শিশুর আর্তনাদ, আর ই’সরাইল পার্লামেন্টে মৃ’ত্যুর উল্লাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :গাজায় ধ্বংসযজ্ঞে নিহতদের মধ্যেই ফিলিস্তিনি বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিতর্কিত বিল নিয়ে ভোটাভুটি শুরু হয়েছে ইসরাইলি পার্লামেন্টে।

গাজা যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত, সেই সময় ফিলিস্তিনি বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিতর্কিত বিল নিয়ে ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে ভোটাভুটি শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষ যখন প্রতিদিন প্রিয়জনের লাশ খুঁজে ফিরছে, ঠিক তখনই এমন বিল উত্থাপনকে আন্তর্জাতিক মহলে গভীরভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা একে “নিষ্ঠুর ও অমানবিক” পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইসরাইলি সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি ৩ নভেম্বর এই বিল উত্থাপন করে, যেখানে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কমিটির অনুমোদনের পর আজ (১০ নভেম্বর) বিলটি প্রথম পাঠের জন্য নেসেটে তোলা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, আইনটি পাস হলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের জন্য ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়া বিপন্ন হবে এবং নতুন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটবে।

বিলটি পাস করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ইসরাইলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই বিল পাস না হলে তাঁর দল ওটজমা ইয়েহুদিত সরকারের অন্যান্য বিলের সমর্থন প্রত্যাহার করবে। ফলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এখন রাজনৈতিক চাপে আছে।

বেন-গভিরের দল সংসদে সংখ্যালঘু হলেও জোট সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য তাদের সমর্থন অপরিহার্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রাজনৈতিক চাপই বিলটি দ্রুত এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। বেন-গভির ও তাঁর দলের দাবি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানই একমাত্র পথ “সন্ত্রাস রোধ” করার জন্য। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি আসলে প্রতিশোধমূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

২০২২ সালের শেষের দিকে ইসরায়েলের সরকার গঠনের সময় লিকুদ পার্টি ও বেন-গভিরের নেতৃত্বাধীন ইহুদি চরমপন্থী জোটের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির অংশ হিসেবে এই বিলের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ, বর্তমান পদক্ষেপটি নতুন নয়, বরং দীর্ঘদিনের নীতিগত পরিকল্পনার ফল।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, চলমান সংঘাতের মধ্যে এই আইন পাস হলে ফিলিস্তিনে সহিংসতা ও প্রতিশোধের চক্র আরও ভয়াবহ হবে। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, শিশুদের আর্তনাদ এবং পরিবারের ব্যথার মাঝে নতুন একটি হত্যার নীতি কার্যকর হলে মানবিক সংকট আরও গভীর হবে।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের এই পদক্ষেপ কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও চরমপন্থী ভোটারদের সন্তুষ্টির জন্য নেওয়া হয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি নয়, বরং নতুন মৃত্যুদণ্ড আইনের মতো সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত