ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

মনোনয়ন তালিকায় নেই বিএনপির শক্তিশালী হেভিওয়েট নেতারা

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৩:১০:৩৯

মনোনয়ন তালিকায় নেই বিএনপির শক্তিশালী হেভিওয়েট নেতারা

মো: আবু তাহের নয়ন :আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু করেন। তবে তালিকায় দেখা গেছে, দলের বহু হেভিওয়েট ও ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন, যা তৃণমূল পর্যায়ে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

তালিকায় বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের দুইবার নির্বাচিত এই নেতা দলের সঙ্কটকালীন সময়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি স্থানীয় জনগণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও প্রাথমিক তালিকায় নাম পাননি। রিজভী দীর্ঘদিন দলের দুর্দিনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মূল কাণ্ডারী হিসেবে পরিচিত। বহুবার মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হলেও তিনি নিঃস্বার্থভাবে দলের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেলও তালিকায় বাদ পড়েছেন। সোহেলের বিরুদ্ধে ৪৫০টির বেশি মামলা রয়েছে এবং দীর্ঘদিন রাজপথ ও নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। তাঁর বাদ পড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিস্ময় ও হতাশা সৃষ্টি করেছে।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হুমায়ুন কবীর প্রাথমিক তালিকায় স্থান পাননি। এ নেতারা দীর্ঘদিন রাজপথ ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনও তালিকায় নেই। তারা দলের কৌশল, রাজনীতি ও নির্বাচনী কার্যক্রমে দীর্ঘদিন সক্রিয় এবং তৃণমূলের মধ্যে সমর্থকপ্রিয়।

সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন এবং ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থীপ্রত্যাশী রবিউল ইসলাম রবিও বাদ পড়েছেন। তারা দীর্ঘদিন রাজপথ ও দলের নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানীও মনোনয়ন পাননি। নেত্রকোণা সদর উপজেলায় তিনি দীর্ঘদিন তৃণমূল বিএনপিসহ জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। তার বাদ পড়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও দলের সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবারের একাধিক সদস্যকে একসঙ্গে মনোনয়ন না দেওয়ার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে এই নীতির কারণে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা, জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতারা বাদ পড়ায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা ও সমর্থকরা মনে করছেন, যারা দীর্ঘদিন দলের জন্য লড়াই করেছেন, তাদের বাদ পড়া নির্বাচনী প্রস্তুতি ও স্থানীয় মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রাথমিক তালিকায় হেভিওয়েট নেতাদের বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং দলের প্রতি সমর্থক ও কর্মীদের ভালোবাসা ও আগ্রহকে জাগিয়ে তুলেছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত