ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

মনোনয়ন তালিকায় হেভিওয়েট নেতারা বঞ্চিত, তৃণমূলে অসন্তোষ

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১২:৫২:৪৪

মনোনয়ন তালিকায় হেভিওয়েট নেতারা বঞ্চিত, তৃণমূলে অসন্তোষ

মো: আবু তাহের নয়ন :আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ২৩৭টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে তালিকায় কিছু নিবেদিতপ্রাণ ও ত্যাগী নেতা বাদ পড়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিলেন, অসংখ্য মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, কিন্তু প্রথম দফার মনোনয়ন তালিকায় তাঁদের নাম নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, এবং উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মনোনয়ন পাননি। দুদু চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। আলালের বিরুদ্ধে ৩৫৭টি মামলা ছিল এবং বহুবার জেল খেটেছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও হাবিব উন নবী খান সোহেলও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। রিজভী ছিলেন দলের দুর্দিনের কান্ডারি এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মূল কাণ্ডারী, সোহেলের বিরুদ্ধে ৪৫১টি মামলা ছিল।

অন্য ত্যাগী নেতারা যেমন, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও বরিশাল-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানীও মনোনয়ন পাননি। নেত্রকোণা সদর উপজেলায় তিনি দীর্ঘদিন তৃণমূল বিএনপিসহ জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। তাঁর মনোনয়ন না পাওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও দলের সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম-১, মাদারীপুর-১, নরসিংদী-৪, ঢাকা-৮ ও বরিশাল-৫সহ বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় নেতারা জানাচ্ছেন, এই বঞ্চিত নেতারা দীর্ঘদিন দলের প্রতি আনুগত্য ও আন্দোলনের জন্য পরিচিত। বিশেষ করে রিজভী, সোহেল, জুয়েল এবং ড্যানীর মতো নেতারা দুর্দিনে দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। তাঁরা আন্দোলন-সংগ্রামের সামনের সারিতে থেকে বিএনপিকে সঙ্কটকালীন সময়ে সমর্থন দিয়েছেন।

মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অনিবার্য কারণে ঘোষিত মাদারীপুর-১ আসন ও মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম স্থগিত রাখা হলো।” এ আসনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের মধ্যে কেউ দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা নন।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এই প্রথম দফার মনোনয়ন তালিকায় আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস থাকা নেতাদের বাদ পড়া পার্থক্য তৈরি করতে পারে। তারা বলছেন, যারা দুর্দিনে দলের জন্য লড়াই করেছেন, তাঁদের বাদ দেওয়া পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে এবং নির্বাচনী মনোবলকে প্রভাবিত করতে পারে।

বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুবদলের সাবেক নেতা মামুন হাসান, ইসহাক সরকারসহ আরও অনেকে। তাঁরা সবাই বহু বছরের রাজপথ ও নির্বাচনী আন্দোলনের পরীক্ষিত নেতারা।

এই বঞ্চিত নেতাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগ এবং আন্দোলন-সংগ্রামের স্বীকৃতি না পাওয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, দলের প্রতি এই অবহেলা স্থানীয় স্তরের মনোবল ও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত