ঢাকা, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২

এনসিপির চিঠি আইন উপদেষ্টাকে

আইন সংশোধনের মতো সিদ্ধান্ত একক ব্যক্তির হতে পারে না

২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৬:৩৩:০০

আইন সংশোধনের মতো সিদ্ধান্ত একক ব্যক্তির হতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, আইন সংশোধনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো একক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক, পরামর্শনির্ভর ও জনস্বার্থমূলক প্রক্রিয়া। কোনো রাজনৈতিক দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার মতো আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দেওয়া সরকারের নিরপেক্ষতার ধারণাকে দুর্বল করবে এবং প্রশাসনের প্রতি জনআস্থা ক্ষুণ্ণ করবে।

রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টাকে পাঠানো এক চিঠিতে দলটি এসব মন্তব্য জানায়। চিঠিতে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের স্বাক্ষর রয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে বিএনপিকে দেওয়া ব্যক্তিগত আশ্বাস নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এনসিপি মনে করে, একজন উপদেষ্টা রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ আইন উপদেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন। তাই এমন আশ্বাস দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থি।

দলটির মতে, এ ধরনের প্রতিশ্রুতি সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এনসিপি আরও জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থানই সঠিক, কারণ রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের মূল উদ্দেশ্য হলো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, আর্থিক স্বচ্ছতা ও নীতিগত দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।

দলটির ভাষায়, যখন একটি নিবন্ধিত দল অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়, তখন তারা নিজেদের নিবন্ধনের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়। এতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় এবং নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

চিঠিতে বলা হয়, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা। ভোটার যে দলের প্রতীক দেখে ভোট দেন, সেই দলকেই তার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু একাধিক নিবন্ধিত দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটার জানেন না, তিনি আসলে কাকে ভোট দিচ্ছেন এতে ভোটার-দায়বদ্ধতার সম্পর্ক ভেঙে পড়ে এবং গণতন্ত্র দুর্বল হয়।

এনসিপি আরও বলে, এই বিধান বড় দলগুলোকে সুবিধা দেয় এবং কৃত্রিম বহু দলীয়তা তৈরি করে। বড় দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ছোট ছোট প্রক্সি দল তৈরি করে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করায়। এতে সংসদে প্রকৃত মতের বৈচিত্র্য হারিয়ে যায় এবং জাতীয় ঐকমত্য বিকৃত হয়।

চিঠিতে এনসিপি প্রস্তাব দিয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হোক, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। যদি যৌথ প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হয়, তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলো নতুন একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন করবে।

এনসিপি মনে করে, এটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করবে এবং প্রতিটি দলকে নিজেদের নীতি ও নেতৃত্বের দায় নিজে নিতে বাধ্য করবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত