ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

সঞ্চয়ের ওপর কাঁচি, অবসরজীবনের চিন্তা বাড়াচ্ছে সরকার

২০২৫ অক্টোবর ১৪ ২১:৫৫:৫৫

সঞ্চয়ের ওপর কাঁচি, অবসরজীবনের চিন্তা বাড়াচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের অন্যতম প্রধান উৎস জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপ কমাতে সরকার ধীরে ধীরে এই ঋণ উৎস থেকে সরে আসছে। আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরও দেড় শতাংশ কমানো হবে—এমন নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ডিসেম্বরেই নতুন সুদহার ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।

সরকার এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তুলনামূলক কম সুদে ঋণ নিচ্ছে। ফলে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হলেও বিপাকে পড়ছেন সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত ও স্থায়ী আয়ের নাগরিকেরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল রেকর্ড ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “মানুষের আগ্রহ যাতে ট্রেজারি বিল বা বন্ডের দিকে যায়, সেটি নিয়েই সরকার কাজ করছে। বিকল্প বিনিয়োগের উৎস থাকায় সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নিলাম অনুযায়ী, ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৯.৫০ শতাংশ, আর ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ৯.৭০ শতাংশ—যা সঞ্চয়পত্রের তুলনায় অনেক কম।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোয় সরকারের ঋণের চাপ কমলেও জনগণের সঞ্চয়ের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “সরকারের জন্য এটি আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও সঞ্চয়পত্রনির্ভর জনগোষ্ঠীর জন্য চাপ তৈরি করবে।”

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে। সুদ কমলে অনেকে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করবে, যা বিনিয়োগ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, “আইএমএফের শর্ত মেনেই সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত