ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

মুনাফাকেন্দ্রিক অর্থনীতি বদলে ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

২০২৫ অক্টোবর ১৩ ২১:০১:৩৯

মুনাফাকেন্দ্রিক অর্থনীতি বদলে ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে হয় না, বরং এটি আমাদের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতার ফল। একই সাথে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার এবং মুনাফাহীন সামাজিক ব্যবসা প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রোমে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ বিশ্ব পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করে। তার মতে, এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়, বরং অর্থনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতা। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যেখানে ক্ষুধা দূরীকরণে কয়েক বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে বিশ্ব অস্ত্রে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মুনাফাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কোটি কোটি মানুষকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এর পরিবর্তে "থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড" গড়ার লক্ষ্য তুলে ধরেন তিনি: জিরো ওয়েলথ কনসেন্ট্রেশন (সম্পদ বিকেন্দ্রীকরণ), জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট (সবার জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ) এবং জিরো নেট কার্বন ইমিশনস (জলবায়ু রক্ষা)। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ ডানোনের উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করেন যে দরিদ্র নারীরাও সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন এবং সামাজিক ব্যবসা কিভাবে মানুষ ও সমাজকে ক্ষমতায়িত করে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, গত বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে পরিচালিত এই আন্দোলন গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তার জন্য ছিল। তিনি জানান, আজ সেই তরুণরাই প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ন্যায়বিচার ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এই অঙ্গীকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে।

ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ড. ইউনূস ছয়টি পদক্ষেপ প্রস্তাব করেন:

১. ক্ষুধা-সংঘাত চক্র ভেঙে যুদ্ধ বন্ধ করা ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

২. এসডিজি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ ও জলবায়ু পদক্ষেপকে গুরুত্ব দেওয়া।

৩. আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক তৈরি করে সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল করা।

৪. স্থানীয় উদ্যোক্তাদের, বিশেষত তরুণ, কৃষক ও নারীদের সহায়তা করা।

৫. রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করে বাণিজ্যনীতিকে খাদ্যনিরাপত্তার সহায়ক করা।

৬. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ ও গ্রামীণ তরুণদের জন্য।

তিনি তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন এবং উদ্যোক্তাবান্ধব আইনি ও আর্থিক কাঠামো তৈরির ওপর জোর দেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত