ঢাকা, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মুসলিম উম্মাহর জন্য চিন্তার স্খলন প্রতিরোধের পথ

২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৫:২৭:৩৪

মুসলিম উম্মাহর জন্য চিন্তার স্খলন প্রতিরোধের পথ

ডুয়া ডেস্ক :মানুষের জীবনে চিন্তার প্রভাব অত্যন্ত গভীর। সুস্থ ও স্বাভাবিক চিন্তা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে, কিন্তু চিন্তার স্খলন ব্যক্তি এবং সমাজকে বিপথগামী করতে পারে। বিশেষত ধর্মীয় জীবনে চিন্তার বিকৃতি বা স্খলনের প্রভাব ভয়াবহ। এই প্রেক্ষিতে মুসলিম উম্মাহর করণীয় নিয়ে আলোকপাত করা জরুরি।

চিন্তার স্খলন বলতে মানুষের ভাবনা ও বিশ্বাসের এমন বিকৃতি বোঝানো হয়, যা ঐশী জ্ঞান ও মানব প্রকৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি অযৌক্তিক ও অরুচিকর, যার ফলাফল নেতিবাচক। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, “তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য আমি তাদের অভিশাপ করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করেছি। তারা শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গেছে।” (সুরা মায়িদা, আয়াত ১৩)

ধর্মচিন্তায় স্খলন বিশেষভাবে গুরুতর। মহানবী (সা.) উম্মতকে সতর্ক করেছেন, “তোমরা দ্বিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি পরিহার করো। কেননা পূর্ববর্তীরা দ্বিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়েছে।” (সুনানে নাসায়ি, হাদিস ৩০৫৭)। চিন্তার স্খলন শুধু ব্যক্তিকে নয়, রাজত্ব ও সমাজকেও ধ্বংস করতে পারে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়ার উদাহরণ অনুযায়ী, উমাইয়াদের রাজত্ব শেষ খলিফা মারওয়ান বিন মুহাম্মদের চিন্তার স্খলনের কারণে বিলীন হয়ে যায়।

ধর্মচিন্তায় স্খলনের ধরন তিন ভাগে বিভক্ত:১. ঈমান ধ্বংসকারী স্খলন, যা মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়। উদাহরণ: নাস্তিক্যবাদ, ইসলাম ত্যাগ বা মুর্তাদ হওয়া, ত্রিত্ববাদ গ্রহণ বা শিরকে লিপ্ত হওয়া।২. চিন্তার ভারসাম্য নষ্টকারী স্খলন, যা ব্যক্তিকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মূল ধারার থেকে দূরে সরায়, তবে ইসলামের বাইরে ঠেলে দেয় না। উদাহরণ: খারেজি, রাফেজি, কাদরিয়া ও মুরজিয়া সম্প্রদায়।৩. নৈতিকতার পরিপন্থী স্খলন, যা ব্যক্তি ঈমান ও ইবাদতে ঠিক থাকলেও নৈতিকতার সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে।

চিন্তার স্খলনের কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো: ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা, শাসকদের ভুল নীতি, ধর্মীয় জ্ঞানের অপূর্ণতা এবং অনির্ভরযোগ্য উৎস থেকে জ্ঞান গ্রহণ। ইতিহাসে যেমন খলিফা মারওয়ান বিন মুহাম্মদের বা মুতাজিলি আলেমদের প্রভাবে চিন্তার স্খলনের উদাহরণ পাওয়া যায়।

ধর্মচিন্তায় স্খলন রোধে মুসলিম উম্মাহকে যেসব করণীয় মেনে চলা উচিত তা হলো:১. বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞানের চর্চা করা।২. ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং তাদের সংশোধনের উপায় বের করা।৩. প্রান্তিকতা পরিহার করা, কারণ অতিরিক্ত বা প্রান্তিক মনোভাব স্খলনের প্রধান কারণ।৪. উত্তম প্রতিরোধ গড়ে তোলা, যা বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তর ও আইনানুগ প্রতিবাদে প্রকাশ পায়। আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করো উত্তম পন্থায়।” (সুরা নাহল, আয়াত ১২৫)

সুন্দর চিন্তা ও জ্ঞানের চর্চা, সহনশীলতা এবং উত্তম প্রতিরোধ মিলিয়ে মুসলিম উম্মাহ ধর্মচিন্তায় স্খলন রোধে সক্ষম হতে পারে। এতে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতি উভয়ই সুস্থ ও সঠিক পথে পরিচালিত হবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত