ঢাকা, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২

বেতন–ভাতা বাড়ানোতে ব্যয়চাপে সরকার, বাজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত

২০২৫ অক্টোবর ০৫ ১০:১৯:০৯

বেতন–ভাতা বাড়ানোতে ব্যয়চাপে সরকার, বাজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজস্ব আয়ে আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকলেও সরকারি ব্যয় বেড়েই চলছে, বিশেষ করে বেতন–ভাতা ও ভর্তুকি খাতে। এই বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ডিসেম্বর মাসেই সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সাধারণত মার্চে বাজেট সংশোধন হলেও, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার তা আগেভাগে আনা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা এবং ভাতার জন্য ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেতন-ভাতা খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর কারণে এই বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খরচের অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণের কাজ চলছে। কোন খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব, তা বিশ্লেষণ করে ডিসেম্বরের সংশোধিত বাজেটে প্রভাব দেখা যাবে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতের ৬২ হাজার কোটি টাকার বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করা হয়েছে, অন্যান্য খাতেও বকেয়া মেটানো হচ্ছে। নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা খরচ আরও বাড়িয়েছে, যা সামাল দেওয়া কঠিন।” তিনি আরও জানান, নতুন বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন পরবর্তী সরকারের ওপর প্রভাব ফেলবে, তাই বর্তমান সরকারকে প্রভিশন রেখে যেতে হবে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জুলাই থেকে মূল বেতনের ওপর ১০–১৫ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা কার্যকর হয়েছে। গ্রেড–১ থেকে ৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড–১০ থেকে ২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তারা। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানোয় অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। একই সময়ে ১,৫১৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে; শিক্ষক–কর্মচারীরাও বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন।

ফেব্রুয়ারিতে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ জন সাবেক কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে উন্নীত হয়েছেন। এই পদোন্নতিতেও সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষকদের ভাতা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বৈদেশিক ভাতাও ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৩৫ কোটি টাকার ব্যয় যোগ হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “২০১৫ সালের পর থেকে বেতন মূল্যস্ফীতির পেছনে আছে—এই ধারণা সঠিক নয়। বেতনের পাশাপাশি নানা ভাতা দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা ইতিমধ্যেই বেড়েছে।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে দেশে দারিদ্র্য বাড়ছে, সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো কতটা যৌক্তিক, তা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।”

সব মিলিয়ে, রাজস্ব আয়ের স্থবিরতা ও ক্রমবর্ধমান ব্যয় সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনায় নতুন ধরনের চাপ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত