ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২

বিএনপিতে ধানের শীষ লড়াইয়ে তরুণ ও ছাত্রনেতারা

২০২৫ অক্টোবর ০২ ১৭:৫২:৩১

বিএনপিতে ধানের শীষ লড়াইয়ে তরুণ ও ছাত্রনেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক :ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা না হলেও বিএনপি সহ অন্যান্য দল জোরেশোরে নির্বাচনি প্রস্তুতি চালাচ্ছে। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক থাকলেও অনেক দল ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রার্থিতা গোপনভাবে নির্ধারণ করেছে।

বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিতে আসনভিত্তিক প্রার্থিতা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনি কৌশলে তরুণ, শিক্ষিত ও জনসম্পৃক্ত প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে এবার দলের নেতৃত্ব বড় পরিবর্তন আনতে চাইছে। এর ফলে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে অনেকেই ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রনেতা এখন বিভিন্ন এলাকায় ভোটের প্রস্তুতি ও জনসংযোগ চালাচ্ছেন।

সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা বিএনপির নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে সম্পাদকীয় পদে আছেন, অথবা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলে নেতৃত্ব দিয়ে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। ছাত্রদল থেকে উঠে আসা অনেকে আগেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

তরুণ ভোটারদের মন জয় করতেই বিএনপি এবার মনোনয়নে নতুন মুখ, বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দেশের মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছে, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা তরুণদের মনোভাবকে কেন্দ্র করে দলের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। দলের তরুণ প্রার্থীও এ কারণে আশায় বুক বাঁধছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য খুলনা বিভাগের একজন সাবেক ছাত্রনেতা জানিয়েছে, আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলাম, জেলও খেটেছি। এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আশা করা হচ্ছে, দল বিবেচনা করলে মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হবে।

যদিও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচন করবে কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, দলের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই মনোনয়ন যাচাই, জরিপ, সাক্ষাৎকার এবং প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে চূড়ান্ত অংশগ্রহণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। সম্প্রতি দলের তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই বর্তমানে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপির মূল কমিটিতে সক্রিয়। তারা একাধিকবার কারাবরণ করেছেন এবং দলীয় সংকটের সময় মাঠে সক্রিয় থেকেছেন। অনেকেই নিজ এলাকায় ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন।

কাউন্সিল ও আসনভিত্তিক পরিস্থিতি:

ঢাকা-৭ আসনে ইসহাক সরকার, রফিকুল ইসলাম রাসেল ও মীর নেওয়াজ আলী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঢাকা-১০ আসনে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ঢাকা-১৫ আসনে মামুন হাসান এবং ঢাকা-১৮ আসনে এস এম জাহাঙ্গীর ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মশিউর রহমান রনি, নরসিংদী-৩/৪/৫ আসনে আকরামুল হাসান, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল ও ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে মীর সরফত আলী সপু, টাঙ্গাইল-১/৩/৫ আসনে জোবাইর আল মাহমুদ রিজভী, ওবায়দুল হক নাসির ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ধানের শীষে লড়বেন।

হবিগঞ্জ-১, মৌলভীবাজার-১ ও সুনামগঞ্জ-১ আসনে তালহা চৌধুরী, শরীফুল হক সাজু ও মাহবুবুর রহমান সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। চট্টগ্রাম-৩, নোয়াখালী-৫, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে রফি উদ্দিন ফয়সাল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, রফিকুল আলম মজনু এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। খুলনা-৩/৪/৬, ঝিনাইদহ-৩/৪ ও যশোর-৬ আসনে রকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারী হেলাল, রফিকুল ইসলাম, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এবং রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ লড়াইয়ে রয়েছেন।

কুষ্টিয়া-১, মাগুরা-২, সাতক্ষীরা-১/৩/৪, বরিশাল-২/৪, ভোলা-৪, পিরোজপুর-৩, পটুয়াখালী-৩, ঝালকাঠি-২, সিরাজগঞ্জ-৫/৬, পাবনা-৩, রাজশাহী-৩, বগুড়া-৫, নেত্রকোনা-৫, ময়মনসিংহ-৬/১০, ফরিদপুর-৩/৪, মাদারীপুর-৩, গোপালগঞ্জ-২/৩ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবনেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, দল বড় হওয়ায় অনেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী হবেন। দল যোগ্য, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বেছে নেবে। মনোনয়ন সংক্রান্ত কোনো জটিলতা হবে না কারণ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের তরুণ ও সাবেক নেতাদের সক্রিয়তা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত