ঢাকা, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২

পতনের আগের রাতে ‘গ্যাং অব ফোর’ শেখ হাসিনাকে কী বলেছিল?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৭ ১৫:১৬:৫৬

পতনের আগের রাতে ‘গ্যাং অব ফোর’ শেখ হাসিনাকে কী বলেছিল?

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফরমাল চার্জে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ৪ আগস্ট রাতের একটি গোপন বৈঠকে শেখ হাসিনা কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ফরমাল চার্জে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “যা হওয়ার হবে, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না।” এরপর তিনি সেনাবাহিনীকে কঠোর হয়ে বিক্ষোভ দমন করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয় ৫ আগস্ট ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে শত শত আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ১৪ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারা দলগতভাবে আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এই পরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ফরমাল চার্জে ইনুর বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ২০ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে ইনুকে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলমান মামলায় উঠে এসেছে যে, আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত গোপন বৈঠকে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমন করতে সেনা ও পুলিশকে নির্দেশ দেন। তবে সামরিক কর্মকর্তারা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝিয়ে ক্ষমতা ছাড়ার পরামর্শ দিলে, তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।”

এছাড়া, ১৪ জুলাই গণভবনে ডাকানো সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার, রাজাকারের বাচ্চা ও নাতি-পুতি’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ফরমাল চার্জে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ড্রোন, হেলিকপ্টার ও অন্যান্য মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করে আন্দোলন দমন করার পরিকল্পনা পূর্ণ করার চেষ্টা করেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিপরিষদের উচ্চপর্যায়ের সদস্যরা সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন। তারা দলগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দেশজুড়ে আন্দোলন দমন করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়, পাশাপাশি অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র, ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। মামলার নথিতে আরও উল্লেখ আছে যে, আন্দোলনকারীদের ওপর এই হিংসাত্মক কার্যক্রম কেবল অপ্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই চালানো হয়নি, বরং এটি একটি সংগঠিত এবং পূর্বপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ছিল, যেখানে সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-যুবকদের জীবনহানি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা লক্ষ্য করা হয়। ফলে এই ঘটনায় দেশের সাধারণ জনগণ এক ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত