ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২

ডিভিডেন্ড বিতরণের দিনেই শেয়ার দামে ধাক্কা!

আবু তাহের নয়ন:
আবু তাহের নয়ন:

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৫:২৬:০৩

ডিভিডেন্ড বিতরণের দিনেই শেয়ার দামে ধাক্কা!

আবু তাহের নয়ন: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত অনেক সময়েই প্রত্যাশিত যুক্তির সঙ্গে মেলে না। একটি কোম্পানি নিয়মিত উচ্চ ডিভিডেন্ড দিলেও তার শেয়ারের দাম তুলনামূলক স্থবির থাকে, আবার কম ডিভিডেন্ড প্রদানকারী কোনো কোম্পানির শেয়ার হঠাৎ আকাশছোঁয়া দামে লেনদেন হতে দেখা যায়। এর সাম্প্রতিক প্রমাণ গ্রামীণফোন ও জিকিউ বলপেন।

ডিভিডেন্ডের ধারাবাহিকতায় শীর্ষে গ্রামীণফোন

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোন শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি বছরই ভালো ডিভিডেন্ড দেয়। সদ্য সমাপ্ত ৩০ জুন, ২০২৫ অর্থবছরের ছয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষণা করেছে ১১০ শতাংশ ক্যাশ অন্তবর্তীকালীন ডিভিডেন্ড। যদিও আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির আয় কিছুটা কমেছে—২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১৬ টাকা ২৯ পয়সা, যা ২০২৫ সালের একই সময়ে দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ২১ পয়সায়।

আজ (মঙ্গলবার) গ্রামীণফোন জানিয়েছে, কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ঘোষিত অন্তবর্তীকালীন ডিভিডেন্ড প্রেরণ করেছে। এমন ভালো খবরের দিনই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, শেয়ারটির দাম আজ ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ০.৫৩ শতাংশ কমে ক্লোজিং হয়েছে ২৯৮ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ বাজার যখন সার্বিকভাবে ইতিবাচক প্রবণতায় ছিল এবং ডিভিডেন্ড প্রেরণের ভালো খবর ছিল, তখন কোম্পানিটির শেয়ার দাম উল্টো নেমেছে।

জিকিউ বলপেনের ব্যতিক্রমী উত্থান

অন্যদিকে, নামমাত্র ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরও জিকিউ বলপেনের শেয়ার যেন বিনিয়োগকারীদের ‘ডার্লিং’। কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মাত্র ৩ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এত সামান্য রিটার্নের পরও বাজারে শেয়ারটির চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

আজ কোম্পানির শেয়ারদাম বেড়েছে ৩৮ টাকা বা ৭.৪৭ শতাংশ। দিনশেষে শেয়ারটির ক্লোজিং হয়েছে ৫৪৬ টাকা ৬০ পয়সায়। এতে প্রশ্ন উঠছে—যেখানে শক্তিশালী ডিভিডেন্ড প্রদানকারী গ্রামীণফোনের শেয়ার স্থবির, সেখানে নগণ্য ডিভিডেন্ড দেওয়া জিকিউ বলপেনের শেয়ারে এত উন্মাদনা কেন?

গ্রামীণফোনের ইতিবাচক দিক

• গ্রামীণফোনের মতো ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলো নিয়মিত স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড প্রদান করে, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়।

• টেলিকম সেক্টর বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি শক্ত ভিত্তি। ভবিষ্যতে ডেটা ব্যবহার ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবার বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণফোনের আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

• যারা স্থায়ী রিটার্ন চান এবং শেয়ারবাজারে ঝুঁকি কমাতে চান, তাদের জন্য গ্রামীণফোনের মতো কোম্পানি আকর্ষণীয়।

গ্রামীণফোনের নেতিবাচক দিক

• আয় কমার কারণে গ্রামীণফোনের প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইপিএস কমে যাওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে।

• শেয়ারবাজারে বাস্তব ডিভিডেন্ডের চেয়ে অনেক সময় গুজব, প্রত্যাশা এবং জল্পনা-কল্পনা বড় ভূমিকা রাখে। এর সুযোগে জিকিউ বলপেনের মতো কোম্পানির শেয়ারদাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

• বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কম ডিভিডেন্ড দেওয়া এমন কোম্পানির শেয়ারদামের এ ধরনের উত্থান বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বুদবুদ তৈরি করতে পারে।

বাজারে গ্রামীণফোন ও জিকিউ বলপেনের শেয়ারদামের বর্তমান চিত্র স্পষ্টভাবে দুটি ভিন্ন বাস্তবতা দেখায়। একদিকে স্থিতিশীল আয় ও উচ্চ ডিভিডেন্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদাম স্থবির, অন্যদিকে নগণ্য ডিভিডেন্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এ বৈপরীত্য প্রমাণ করে, শেয়ারবাজার কেবল আর্থিক পারফরম্যান্সে নয়, বরং মনস্তত্ত্ব, প্রত্যাশা এবং বাজারে প্রবাহিত গুজবের ওপরও ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত