ঢাকা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

রাজনীতিতে ডিম নিক্ষেপ: প্রতীকী প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৫:০৩:১৬

রাজনীতিতে ডিম নিক্ষেপ: প্রতীকী প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : হাঁস বা মুরগির ডিম, টেবিলের সাধারণ খাবার হলেও রাজনৈতিক ও প্রতিবাদের মঞ্চে এটি প্রায়ই প্রতীকী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নানা সময়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে রাজনীতিকদের দিকে ডিম ছুঁড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ডিম নিক্ষেপের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা ডিম ছুঁড়ে গাড়ির সামনের কাচ ঘোলা করে দেন।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান বলেন, “প্রতিবাদ করতে গিয়ে খাবার ছুড়ে মারার কারণ হতে পারে- এটা সস্তা, সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান। ডিম বা টমেটো ফেটে গেলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি জাগে এবং অহিংস প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।” তিনি আরও বলেন, “পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়লে তারা গুলি করতে পারে, কিন্তু ডিম বা টমেটো ছুঁড়ে মারলে পুলিশের প্রতিক্রিয়া কমনীয় হয়, তাই এর প্রতীকী মূল্য রয়েছে।”

ডিম নিক্ষেপের ইতিহাস নতুন নয়। মধ্যযুগে বন্দীদের ওপর শাস্তি হিসেবে ডিম নিক্ষেপ করা হতো। লিখিতভাবে ১৮শ’ সালের দিকে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের ‘আয়েল অফ ম্যান’-এ মেথোডিস্টদের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ধরা পড়ে। ১৮৩৪ সালে মার্কিন কবি জর্জ হোয়াইটার দাসত্ববিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার সময় ডিম নিক্ষেপ করা হয়। ১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজও এক জনসভায় ডিমে আক্রান্ত হন। ২০০১ সালে ব্রিটেনে উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে ডিম নিক্ষেপ করলে তিনি নিজে প্রতিক্রিয়া দেখান।

বর্তমান সময়ে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও লক্ষ্য করা যায়। হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার ২০০৩ সালে, ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০০৪ সালে, আফগানি বিক্ষোভকারীরা ২০১১ সালে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কন্স্যুলেটের দিকে ডিম নিক্ষেপ করেন। ২০১৩ সালে লন্ডনে প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিনে ডিম নিক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়। একই বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও ফরাসি কৃষকরা ডিম ভাঙার প্রতিশ্রুতি দেন।

ডিম, যা সাধারণ খাবার, তা রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বহু শতক ধরে। এটি অহিংস প্রতিবাদের একটি দৃশ্যমান, সস্তা ও প্রতীকী মাধ্যম হিসেবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত