ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজারে দীর্ঘ ২০ বছরের অপেক্ষার কী অবসান হবে?

মোবারক হোসেন:
মোবারক হোসেন:

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ০৬:২৯:৫৬

শেয়ারবাজারে দীর্ঘ ২০ বছরের অপেক্ষার কী অবসান হবে?

মোবারক হোসেন: দীর্ঘ দুই দশক ধরে ব্যর্থতার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আবারও শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, কারণ এটি ২০০৫ সালের উদ্যোগের মতোই, যা ১৯৯৬ সালের ধসের পর বাজারে ভালো মানের শেয়ার আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

২০০৫ সালের উদ্যোগটি শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কিছু কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনতে পেরেছিল। ২০০৮-০৯ সালে সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তাদের নিজস্ব এবং সরকারি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিক্রি করতে রাজি করানো যায়নি। ২০১০ সালের ডিসেম্বর এবং ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শেয়ারবাজার ধসের পর গত ১৫ বছর ধরে এই উদ্যোগ প্রায় পরিত্যক্ত ছিল, যার ফলে বাজারে ভালো শেয়ারের অভাব রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ক্যাপিটাল মার্কেটের পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম এই ব্যর্থতার জন্য কাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে পরিচালক হিসেবে আমলাদের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করার প্রবণতাই এই উদ্যোগের ব্যর্থতার মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি সরকার আমলাদের পরিবর্তে অ-আমলাদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিত এবং বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করত, তাহলে এই উদ্যোগ আরও বাস্তবসম্মত হতে পারত।

পূর্ববর্তী উদ্যোগগুলোর মতো এবারও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ছয়টি বহুজাতিক কোম্পানি—ইউনিলিভার, নেসলে, নোভারটিস, সিনজেনটা, সিনোভিয়া (পূর্বে সানোফি বাংলাদেশ) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি—সহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকার অধিকাংশ বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রায় ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন আশা প্রকাশ করেছেন, বর্তমান উদ্যোগটি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রচেষ্টাকে সফল করবে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের মতো বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বাজারে এলে স্থানীয় শেয়ারবাজার শক্তিশালী হবে, এর ভাবমূর্তি বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।

ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশের কাউন্সিল সদস্য মো. শফিকুল আলম বলেন, অনেক বহুজাতিক কোম্পানি প্রচুর মুনাফা করছে এবং তাদের শেয়ার বাজারে খুব জনপ্রিয় হবে। তবে তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মুনাফা ভাগ করে নিতে আগ্রহী নয়। তিনি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে ব্যর্থতার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০০-এর বেশি বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করলেও মাত্র ১৬টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। ২০১০ সালের পর থেকে কোনো নতুন বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, সেই একই কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত না হয়েই ব্যবসা করছে। এর কারণ, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে তাদের বাজারে আনার জন্য সরকারের কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই।

গত ৩১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের পাশাপাশি সরকারি শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) এখনও ডিসেম্বরের মধ্যে এই অধ্যাদেশ জারির প্রস্তুতি নিতে পারেনি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা আপাতত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে সরকারের মালিকানাধীন শেয়ারগুলো বিক্রির ওপর মনোযোগ দিচ্ছেন। যদি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, দায় কার?

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, দায় কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন,... বিস্তারিত