ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজারে বড় কেলেঙ্কারি: শিবলী-রিয়াজ আজীবন নিষিদ্ধের সুপারিশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ২২:২২:২২

শেয়ারবাজারে বড় কেলেঙ্কারি: শিবলী-রিয়াজ আজীবন নিষিদ্ধের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোয়েস্ট বিডিসির (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার) কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালক এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম এবং সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের নিবন্ধন বাতিল ও বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের ন্যূনতম এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড, ফৌজদারি মামলা এবং এলআর গ্লোবালের অধীনে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর উপর ফরেনসিক অডিট সম্পন্ন করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ১২টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্তে কোয়েস্ট বিডিসির অনিয়মসহ বেশ কিছু গুরুতর কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালনা পর্ষদ উচ্চ দামে শেয়ার কেনা, এলআর গ্লোবালের কর্মকর্তাদের পরিচালক পদে বসানো, সম্পদ মূল্যায়নে যোগসাজোশ, অনুমোদনবিহীন ব্যবসা পরিচালনা, মূলধন বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো অনিয়ম করেছে। একই সঙ্গে পরিচালকদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।

এলআর গ্লোবালের সিআইও রিয়াজ ইসলাম ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের যোগসাজোশে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ছয় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে পদ্মা প্রিন্টার্সের ৫১ শতাংশ শেয়ার অস্বাভাবিক দামে কেনা হয়। এরপর নিজেদের কর্মকর্তাদের কোম্পানির পরিচালক পদে বসানো হয়। তদন্ত কমিটি বলছে, এ প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, কোয়েস্ট বিডিসি ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই অনুমোদন ছাড়াই মূলধন ১.৬০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও এলআর গ্লোবালের নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া বোর্ড মিটিংয়ের কার্যবিবরণী জাল, অনুমোদনহীন ব্যবসা পরিচালনা, বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগও প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। তদন্ত কমিটি মনে করছে, এসব অনিয়ম ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

অসাধু কার্যকলাপ থেকে অবৈধ অর্থ লেনদেন, দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। যে কারণে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এলআর গ্লোবালের সিআইওর বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ দুদকে পাঠিয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

উল্লেখ্য, বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড, আল ইসতানিয়া এবং আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রীন জিরো কুপন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে অনিয়ম, প্রভাব খাটানো, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দায়িত্বশীল আচরণের ঘাটতির অভিযোগে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতকে ইতোমধ্যেই শেয়ারবাজার থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে বিএসইসি।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত